পকেট কমিটি হতে যাচ্ছে রাজশাহী জেলা আ’লীগে


নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে করা হচ্ছে। নতুন কমিটিতে বাদ পড়ছেন আগের কমিটির অন্তত ৪০ জন নেতা।হাইব্রিড এবং সভাপতিও সম্পাদকের আত্মীয়-স্বজনসহ ঘনিষ্ঠরাই থাকছেন নতুন কমিটিতে।অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেয়া নতুন কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকের নিজ নিজ উপজেলার নেতাদেরই প্রাধান্য দেখা গেছে।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। এতে সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয় রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারাকে। এছাড়া বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। এর তিন মাস পর গত বৃহস্পতিবার সভাপতি ও সম্পাদক কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা দিয়ে আসেন।

এর একটি কপি পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ৭৫ সদস্যের হলেও তালিকায় রয়েছেন ৭৪ জন। সদস্য একজন কম করা হয়েছে। তালিকায় আগের কমিটির অন্তত ৪০ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আংশিক কমিটির নেতাদের নিজ নিজ এলাকার নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এই তালিকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তালিকা অনুযায়ী, সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। সহ-সভাপতিরা হলেন- অনিল কুমার সরকার, আমানুল আহসান দুদু, অধ্যক্ষ আ.ন.ম মনিরুল ইসলাম তাজুল, অধ্যক্ষ এসএম একরামুল হক, রিয়াজ উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম দুলাল, শরীফুল ইসলাম শরীফ, সাবিয়ার রহমান মাস্টার, শরীফ খান, সোহরাব হোসেন ও জাকিরুল ইসলাম সান্টু। সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, আয়েন উদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল। আইনবিষয়ক সম্পাদক এজাজুল হক মানু। এছাড়া কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক প্রতীক দাস রানা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মেহবুব হাসান রাসেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রেজাওয়ানুল হক পিনু মোল্লা, দপ্তর সম্পাদক প্রদ্দ্যেত কুমার সরকার, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এন্তাজ আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমজাদ হোসেন নবাব, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক জিএম হিরা বাচ্চু, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পূর্ণিমা ভট্টাচার্য, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক আলী খাজা, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, শিক্ষা ও মানববিষয়ক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক জিয়াউদ্দিন টিপু, শ্রম সম্পাদক আসলাম আলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ সরকার মাসুদ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. চিন্ময় দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আসাদুজ্জামান আসাদ, আবদুস সামাদ, আবুল কালাম আজাদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. বাক্কার ও কোষাধ্যক্ষ আজিজুল আলম।

সদস্যরা হলেন- বেগম আখতার জাহান, ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, আসাদুজ্জামান আসাদ, শাহরিয়ার আলম এমপি, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি, ডা. মুনসুর রহমান এমপি, আদিবা আনজুম মিতা এমপি, ইব্রাহিম হোসেন, আবদুস সালাম, নজরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ইয়াসিন আলী, সাইফুল ইসলাম বাদশা, আক্কাছ আলী, ফকরুল ইসলাম, গোলাম রাব্বানী, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আবদুল মালেক, আশরাফুল ইসলাম বাবুল, অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, গোলাম সারওয়ার আবুল, শহিদুজ্জামান শহিদ, রবিউল ইসলাম রবি, আবদুর রাজ্জাক, সরদার জান মোহাম্মদ, খাদেমুন নবী চৌধুরী, সামশুল ইসলাম, শিউলী রানী সাহা, মাহবুবুল আলম মুক্তি, মরজিনা বেগম, সুরঞ্জিত কুমার সরকার, আবদুল মান্নান, নীলিমা বেগম এবং বদরুল ইসলাম তাপস।

আগের কমিটি থেকে বাদ পড়া প্রায় ৪০ নেতার মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য একেএম আতাউর রহমান খান, গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া, বদিউজ্জামান বদি, সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুল মজিদ সরদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, পবা উপজেলা চেয়ারম্যান মুনসুর রহমান, আগের কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান আক্তার, প্রবীণ নেতা আবদুল বারীর মতো ত্যাগী নেতারা আছেন।

অথচ সরকারি চাকরিজীবী হয়েও কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন মোজাম্মেল হক ও একরামুল হক। মোজাম্মেল হক দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। আর একরামুল হক পুঠিয়ার বানেশ্বর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পেতে যাওয়া গোদাগাড়ীর সাবিয়ার রহমান মাস্টার কোনোদিন দলই করেননি। দলে তার কোনো পদও ছিল না। তবে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল তবে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদকের পদ পেতে যাওয়া আলী খাজাও কোনো দিন আওয়ামী লীগ করেননি। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। রাজশাহী নগরীর ঘোষপাড়া এলাকার মরু হামিদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।

উপ-দপ্তর সম্পাদকের পদ পেতে যাওয়া আবদুস সাত্তার সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার ব্যক্তিগত সহকারী। দপ্তর সম্পাদক হতে যাওয়া প্রদ্যূত কুমার সরকারও দারা ঘনিষ্ঠ। তিনিও কখনও আওয়ামী লীগের পদ-পদবীতে ছিলেন না। তিনি দুর্গাপুরের নওপাড়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। সদস্য হিসেবে পদ পেতে যাওয়া নীলিমা বেগমের রাজনৈতিক পরিচিতি হিসেবে লেখা হয়েছে তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। অথচ দলীয় নেতারা বলছেন, নীলিমা বেগম কখনই মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ছিলেন না।

এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে যাওয়া খাদেমুন নবী চৌধুরী আগে বিএনপি করতেন। শ্রম সম্পাদক হতে যাওয়া আসলাম আলীর নামের পাশে রাজনৈতিক পরিচিত হিসেবে লেখা হয়েছে পুঠিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের নেতা। অথচ এ নামে শ্রমিক লীগের কোনো নেতাকে চিনতেই পারছেন না দলীয় নেতারা। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হতে যাওয়া পিনু মোল্লা সভাপতি মেরাজ মোল্লার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। জিয়াউদ্দিন টিপু ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের নেতা। উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পেতে যাওয়া মো. বাক্কারের রাজনৈতিক পরিচিত হিসেবে লেখা হয়েছে পবা থানা আওয়ামী লীগের নেতা। অথচ তিনিও কোনো পদ-পদবীতে ছিলেন না আর নির্বাচনে সামশুল করেছিলেন নৌকার বিরোধিতা।

প্রস্তাবিত কমিটির বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নয়।


শর্টলিংকঃ