মামুনুল হককে প্রধান আসামি করার দাবি বিচারপতি মানিকের


ইউএনভি ডেস্ক

হেফাজত নেতা আল্লামা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করার দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। একই সঙ্গে তিনি ওই মামলায় দ্বিতীয় আসামি হেফাজত ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও তৃতীয় আসামি হিসেবে শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী)-এর নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।


রোববার রাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে টকশোতে অংশগ্রহণ করে তিনি এ দাবি জানান। এ টকশোটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

টকশোতে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এটি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র। আজকে জাহাঙ্গীর কবির নানক সাহেব অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছেন, একাত্তরের চেয়ে বড় যুদ্ধ এগিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, এখানে এক নম্বর আসামি করতে হবে রাজাকারের বাচ্চা মুমিনুল (মামুনুল) হককে, যে হচ্ছে সবকিছুর জন্য বেশি দায়ী। দুই নম্বর আসামি করতে হবে বাবুনগরীকে (হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে) এবং তিন নম্বর আসামি করতে হবে আজকে এখানে যে উপস্থিত আছেন তাকে যদি গ্রেফতার করা হয়, তাকে যদি ইন্টারোগেশন (জিজ্ঞাসাবাদ) করা হয়, তাহলে অনেক কিছু জানা যাবে। এই চেয়ারম্যানের কতটুকু সম্পৃক্ততা ছিল সেটা জাতি জানতে চাচ্ছে এবং আমরা জানতে চাচ্ছি। সে নিশ্চয়ই সম্পৃক্ত ছিল এর সঙ্গে। তার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখতে হবে, তার পরিবারে কোনো রাজাকার আছে কিনা সেটা দেখতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আরও অবাক হয়েছি যে, ইউএনও অস্ত্রধারী মানুষগুলোর সঙ্গে মিলে মাইকে কথা বলছে। তার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখতে হবে। তার ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো রাজাকার আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। তার চাকরি নিশ্চয়ই হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের আমলে। আমরা বারবার বলছি, প্রশাসেনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজাকার-আলবদররা লুকিয়ে আছে।

বিচারপতি মানিকের বক্তব্যের মাঝে উপস্থাপিকা প্রশ্ন করেন, ‘আমি সকলেরটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম কেন নিয়েছেন? পরিস্থিতি সামাল দিতে ওনি তো আগের রাত থেকেই উদ্যোগ নিয়েছেন, বড় একটি অংশকে ফেরৎ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন।’

এ প্রশ্নের উত্তরে ক্ষুদ্ধ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমাকে বলতে দেন, দুই দিন আগে মাইকিং হয়েছে মসজিদ থেকে, তারপরে আজকে সে (উপজেলা চেয়ারম্যান) যে কথা বলতেছে, এর থেকে আরও পরিষ্কার সে এটার সঙ্গে ছিল। তাকে গ্রেফতার করা উচিত, তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক কিছুই বেরিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘আজকে শাহরিয়ার কবির সাহেবের যে আর্টিকেলটি জনকণ্ঠে বেরিয়েছে তার থেকেই পরিষ্কার। আর আরেকজন লোক শোয়েব যে হেফাজতের নেতা, সে লন্ডন থেকে বহু পয়সা নিয়ে এসছে। এবং এতে পাকিস্তান দূতাবাসও জড়িত, পাকিস্তান সরকারও জড়িত আছে। আজকে আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু জন্মতশতবর্ষ পালিত হচ্ছে, এই লোকটা (আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান) বারবার ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘বঙ্গবন্ধু’ বলছে, অথচ ওই লোকটা বঙ্গবন্ধুর চরম বিরোধী একটা লোক। আজকে এইসব অনুষ্ঠান নস্যাৎ করার জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন, তার এই আগমন নস্যাৎ করার জন্য এরা লেগে উঠেছে।’

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরও বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, মুমিনুল হক কত বার আইসিটি এক্টে অপরাধ করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় সে ধর্মবিরোধী কথা বলছে, সে অসাম্প্রদায়িক কথা বলছে, সে ঘৃণার কথা বলছে। তাকে আজও গ্রেফতার করা হলো না, এতে আমরা সত্যিই বিস্মিত। এজন্য আমরা বলছি, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে আছে রাজাকার-আলবদররা।’

এসময় উপস্থাপিকা উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করেন, ‘আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, আপনারা যে মামলা করেছেন সেখানে মামুনুল হক ও বাবুনগরীকে আসামি করা হয়েছে কিনা? তাদের উসকানির প্রসঙ্গটা আছে কিনা?’
এসময় অন্যপ্রান্ত থেকে উত্তেজিত শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলতে থাকেন, ‘আরে ও তো নিজেই দায়ী, ও তো আসামি, ও নিজে একজন অপরাধী।’

উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, আমরা (মামুনুল সমর্থকদের) মিছিল ফিরিয়ে এনে দেখতে পাই, ওইপাড়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। এরা ৮৮টি ঘর ভাঙছে। প্রত্যেকটা ঘরের স্টিলের আলমারি ভাঙা। প্রত্যেকটা ঘরের সুকেশগুলো ভাঙা। চাল, ডাল রাখার মটকাগুলোও ভাঙা। আমরা ওখানে পুলিশ রেখে, আমি ইউএনও সাহেব ও ওসি সাহেবসহ আমরা ফিরে আসি। আমরা ওই সময় সবাইকে শান্ত করি। সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। ওখান থেকে সবাইকে আমরা বাড়িতে ফেরৎ পাঠাই।

এদিকে সোমবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ওয়েবিনারে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। ঘটনার সঙ্গে জড়িত হেফাজতসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাকিস্তান দূতাবাসের গতিবিধি নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।

মানিককে চেয়ারপার্সন করে তদন্ত কমিশন: সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে চেয়ারপার্সন করে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস ও একাত্তরের ঘাতক দালার নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে এই তদন্ত কমিশন গঠনের কথা জানান নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

তদন্ত কমিশনের সদস্য থাকবেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আলোচিত সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।


শর্টলিংকঃ