তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে বসন্তের আগমনী বার্তা দিচ্ছে সোনারাঙা মুুকুল। জেলার আম বাগানগুলোতে এখন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আম চাষীদের সোনালী স্বপ্ন। মুকুলের বাহারি রঙ আর মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠছে প্রকৃতি। আম চাষীরা বলছেন- যেভাবে গাছে মুকুল এসেছে, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে; তবে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।
জেলার বেশ কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের সারি সারি গাছে সবুজ পাতার মধ্য থেকে উঁকি দিয়ে মুুকুল ফুটতে শুরু করেছে। চাষীরা বলছেন- গত দুই সপ্তাহ ধরে মুকুল আসতে দেখা যাচ্ছে। ছোট ও মাঝারি আকারের গাছগুলোতে বেশি মুকুল এসেছে। সকল গাছে মুকুল ফুটতে আরও দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। গেল এক মাস ধরে দিন-রাত গাছের যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিক ও চাষীরা। তবে আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার উপর।
চাষীরা জানান, গত বছর স্মরণকালের সবচেয়ে কম মূল্যে আম বিক্রি হয়েছে। ফলে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হয়েছে অধিকাংশ আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। চলতি বছর লাভবান হওয়ার আশায় বাগান পরিচর্যায় মন-প্রাণ দিয়ে পরিশ্রম করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে । এসব বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০ লাখ আম গাছ আছে। অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মঞ্জুরুল হুদা বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে জেলার ৩০ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টন।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রায় সব জাতের আমের উৎপাদন হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর কৃষিজমিতে বাড়ছে আমের আবাদ। আম রুপালি, ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, রাজভোগ ও গোপাল ভোগসহ বিভিন্ন জাতের আমের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। তথ্যমতে, দেশের অধিকাংশ আম বাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। জেলার উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাগান মালিক সেতাউর রহমান বাদশা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে তার বাগানের গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। তিনি এক মাস ধরে গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুলে রোগ বালাইয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বালায়নাশক স্প্রে করছেন। এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
গোমস্তাপুর উপজেলার আম ব্যবসায়ী কাউসার ফয়জুলী রিবন জানান, গত বছর আমের বাজার মন্দা হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বছর লিজ নেওয়া বাগানে প্রয়োজনীয় কীটনাশকসহ গাছের পরিচর্যা করছেন তিনি। লাভের দেখা মিলবে বলে আশা তার।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর শীতের তীব্রতা ও স্থায়ীত্ব কম থাকায় ১৫ দিন আগেই গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। শীত কম হওয়ায় রোগ বালাই গত বছরের তুলনায় কম হবে বলে মনে করেন এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।