সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা


ইউএনভি ডেস্ক:

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদনের ওপরই ভরসা রাখতে চান তার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মনে করছেন, এর আগে সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার পরিবার এবারও সরকারের কাছে তার স্থায়ী জামিনের আবেদন করেছে।

সরকার চাইলে সাজা মওকুফও করতে পারে। এখানে আদালতের চেয়ে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। তাই তারা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতীক্ষায় আছেন। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, আদালতের আদেশ ছাড়া সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির জন্য করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আইনি দিক বিচার-বিশ্নেষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে সাময়িক মুক্তি দেওয়ার সময় আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানান, তিনি এ ধরনের কোনো আবেদনপত্র হাতে পাননি। পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ মাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। এখানে করোনার কারণে তার উন্নত কোনো চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এসব বিষয়ে বিদেশে চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। এখন বাইরে চিকিৎসার বিষয়টি সম্পূর্ণ খালেদা জিয়ার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তিনি বাইরে চিকিৎসা নিতে চান কিনা কিংবা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য কোনো সুযোগ তৈরি হচ্ছে কিনা, এসব বিষয় নির্ভরশীল।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু করোনার কারণে তা হয়নি। তাই সরকার স্বাভাবিক কারণে খালেদা জিয়ার সাজা সম্পূর্ণভাবে মওকুফ করে দিতে পারে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গতকাল রাতে চেয়ারপারসনের বাসায় যান। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এর আগেও খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দিয়েছে। এবারও তার পরিবার আবেদন করেছে। এখন তার মুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের এখতিয়ারে পড়ে। দেশের বাইরে নিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রয়োজন।

তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালতের আদেশ ছাড়া সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। আদালতের অনুমতি ছাড়া সরকার চিকিৎসার জন্য কাউকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে না। আইনের দৃষ্টিতে এ ধরনের আবেদনগুলো কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে তার পরিবার। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, মুক্তির বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই স্থায়ী মুক্তির আবেদন করেন তার ছোটভাই শামীম এস্কান্দার।

গত ২৫ মার্চ দুই শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিতাদেশের পর ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সেই মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এর পরই অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।


শর্টলিংকঃ