সিরাজগঞ্জ সড়কে ১৩ মাসে ঝরেছে ৬৪ জনের প্রাণ


ইউএনভি ডেস্ক :

সিরাজগঞ্জে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে দুর্ঘটনাবেড়েই চলেছে। গত ১৩ মাসে ৩৮৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ৬৪ জন। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৮১১ জন।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রতীকি ছবি।

জানা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ জেলায় ৯৪ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এ মহাসড়কের ওপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল গোলচত্বরকে কেন্দ্র করে চারদিকে মহাসড়কে চলাচল করে হাজারো যান। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, চালকের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতিতে পাশ কাটানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অনুমোদনহীন থ্রি–হুইলার চলাচলসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে মহাসড়কে প্রায়ই ছোট–বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরছে।

অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ মাসে ৩৮৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। গড়ে প্রতি মাসে ২৯টি করে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৪ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে ৫ জন করে সড়কে প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ৮১১ জন। এসব আহত মানুষের মধ্যে অনেকেই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। গত বছরের জুনে সর্বোচ্চ ৯টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৭ জন, আহত হয় ৯২ জন। এর বাইরেও ছোটখাটো অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলো গণমাধ্যম ও পুলিশের নজরে আসে না।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী উপপরিচালক আবদুল হামিদ বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার আহত ব্যক্তি এবং লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়। একটি দুর্ঘটনা মানেই হলো অনেক পরিবারের কান্না। স্বজন হারানোর ব্যথায় ম্লান হওয়া। কিংবা দুর্ঘটনায় শিকার কোনো মানুষের পঙ্গুত্ব বরণ করা। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

পুলিশ, পরিবহনশ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব দুর্ঘটনার পেছনে অনেক কারণ থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চালকদের অদক্ষতা, ক্লান্তি ও তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতিতে অন্য কোনো গাড়িকে পাশ কাটানো, ট্রাফিক আইন না মানা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, বেহাল সড়ক-মহাসড়ক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহাসড়কে অনুমোদনহীন বিভিন্ন প্রকারের হালকা যান চলাচল, যেখানে-সেখানে যানবাহনে তল্লাশি প্রভৃতি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূরপাল্লার তিনটি পরিবহন কোম্পানির পাঁচজন চালক বলেন, মালিকের কথামতো ও নিয়মমতো গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক সময় চালক হিসেবে ট্রাফিক আইন ও নিয়মকানুন মেনে চলা সম্ভব হয় না। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁরা আরও বলেন, দুই-চার মাস চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে অনেকেই চালকের আসনে বসেন। এঁরা খুব বেপরোয়া হন। এই চালকদের অদক্ষতাও দুর্ঘটনার বড় কারণ। কোনো চালকই আসলে চান না তাঁর গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হোক, হতাহতের ঘটনা ঘটুক।

মহাসড়ক–সংলগ্ন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ও রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান যথাক্রমে নবিদুল ইসলাম ও আবদুল জব্বার সরকার বলেন, কত বিচিত্র কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। ভুক্তভোগীরাই কেবল তা হাড়ে হাড়ে টের পায়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি আর বেহাল সড়কই দুর্ঘটনার বড় কারণ। তা ছাড়া চালক ও পরিবহনশ্রমিকদেরও কিছু দায় আছে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানী বলেন, সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা গাড়ির চালক-মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।


শর্টলিংকঃ