স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে স্পেসএক্সের সহায়তা নিচ্ছে অ্যামাজন


ইউএনভি ডেস্ক : 

স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক ‘কুইপার’ এর পরবর্তী উৎক্ষেপণে সহায়তার জন্য স্পেসএক্সের তিনটি ‘ফ্যালকন ৯’ রকেট বুকিং দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন।

 

অ্যামাজনের লক্ষ্য হল, গোটা বিশ্বের ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট খাতে বড় অগ্রগতি আনতে কুইপার প্রকল্পের অধীনে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে তিন হাজার ২৩৬টি স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে স্পেসএক্সের ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, যারা এরইমধ্যে কক্ষপথে প্রায় পাঁচ হাজার স্যাটেলাইট বসিয়ে বৈশ্বিক কভারেজের প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

২০১৯ সালে কুইপার প্রকল্পের পেছনে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যস্থির করা অ্যামাজন গেল শুক্রবার জানিয়েছে, তারা তিনটি ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটের মাধ্যমে বেশকিছু স্যাটেলাইট স্থাপন করবে, যা শুরু হবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে।

‘ফ্যালকন ৯’ রকেটে বিভিন্ন মিশন পরিচালনার জন্য এরইমধ্যে জেফ বেজসের বাণিজ্যিক রকেট কোম্পানি ব্লু অরিজিন, বোয়িং ও লকহিডের যৌথ প্রকল্প ‘ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স’ এবং ইউরোপীয় কোম্পানি ‘এরিয়েনস্পেস’ এর সঙ্গে ৮৩টি রকেট উৎক্ষেপণের চুক্তি সেরেছে স্পেসএক্স।

২০২১ সালের শেষ দিকে ও ২০২২ সালে যখন এ ৮৩টি উৎক্ষেপণ নিয়ে স্পেসএক্স যাচাই বাছাই করছিল, তার পরপরই ২০২৩ সালের অগাস্টে স্পেসএক্স’কে স্যাটেলাইট চুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ঠিকমতো বিবেচনা না করার অভিযোগ তুলে অ্যামাজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কোম্পানির এক শেয়ার অংশীদার। তবে, মামলার বিভিন্ন দাবিকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে অ্যামাজন।

‘ক্লিভল্যান্ড বেকার্স অ্যান্ড টিমস্টারস পেনশন ফান্ড’ নামের ওই আর্থিক তহবিল ডেলাওয়্যারের আদালতে দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলেছে, উৎক্ষেপণের চুক্তিটি সে সময় অ্যামাজনের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থ ব্যয়ের ঘটনা ছিল।

অ্যামাজনের সবচেয়ে বড় অধিগ্রহণের চুক্তি ছিল ২০১৭ সালে, যখন তারা এক হাজার ৩৭০ কোটি ডলারে সুপারমার্কেট চেইন ‘হোল ফুডস’ কিনে নিয়েছিল।

আদালতের আদেশ অনুসারে, ওই শেয়ার অংশীদারের মামলার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রমাণ দেওয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার কেবল তিনদিন আগে স্পেসএক্সকে নিজস্ব রকেট উৎক্ষেপণ প্রকল্পে যোগ করার ঘোষণা দিয়েছে অ্যামাজন।

সেপ্টেম্বরে মামলাটি খারিজ করার আপিল করে অ্যামাজন বলেছিল, তারা পরবর্তী কোনো ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য দেবে। আর যেদিন অ্যামাজন স্পেসএক্স-এর সঙ্গে চুক্তির ঘোষণা দিল, ঠিক একই দিনে ৪ ডিসেম্বর অ্যামাজনের ওই আপিলের সময়সীমা শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আদালত।

প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর তুলনায় পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্টারলিংক স্যাটেলাইট দ্রুত স্থাপনে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে স্পেসএক্স-এর পুনর্ব্যবহারযোগ্য ফ্যালকন ৯ রকেট। আর এর মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্যাটেলাইট অপারেটর হওয়ার কৃতিত্বও অর্জন করেছে ইলন মাস্ক মালিকানাধীন কোম্পানিটি।

এর আগে রাশিয়ার সউজ রকেটের ওপর নির্ভর করত স্টারলিংকের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ওয়ান ওয়েব’। তবে, ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়া ওয়ান ওয়েবের পাঁচ কোটি ডলারের স্যাটেলাইট জব্দ করার পর তারাও স্পেসএক্সের শরণাপন্ন হয়।

মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের শর্ত হল, অ্যামাজন যেন ২০২৬ সালের মধ্যে কুইপার নেটওয়ার্কের অর্ধেক স্যাটেলাইট স্থাপন করে। অক্টোবরে নিজেদের প্রথম দুটি প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠানোর পাশাপাশি গত মাসে এই পরীক্ষা সফল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।

অ্যামাজনের প্রত্যাশা, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে নিজস্ব সেবার ‘প্রথম দিকের গ্রাহকদের’ যেন যথেষ্ট স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক দেওয়া সম্ভব হয়। তাই স্পেসএক্স-এর পাশাপাশি ও ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্সের ‘অ্যাটলাস ৫’ ও এখন পর্যন্ত উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় থাকা ‘ভালকান’ রকেটে কয়েক ব্যাচ স্যাটেলাইট পাঠানোর লক্ষ্যস্থির করেছে কোম্পানিটি।


শর্টলিংকঃ