অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। চাওয়া-পাওয়া আর আশা-নিরাশাগুলো পেছনে ফেলে আরেকটি বছর কালের স্রোতে হারিয়ে গেলো। ১৪২৬ সালের শুভাগমনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রভাতের সূচনা। নতুন বছরের শুরুতে ইউনিভার্সাল২৪নিউজ.কম এর অগণিত পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীসহ সবার প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শুভ নববর্ষ।

ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং হাজার বছরের রাজনৈতিক বিবর্তনে আমাদের সংস্কৃতিতে যে বৈচিত্র এসেছে সেখানে সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলা, হিজরি এবং গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় সমভাবে গুরুত্ব বহন করছে।

আমাদের ভাষার ঐতিহ্য ও ইতিহাস যেমন স্বকীয় অনুপ্রেরণায় দীপ্যমান, তেমনি আমাদের রয়েছে একটি নিজস্ব ক্যালেন্ডার, যা জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধ ও গর্বিত করেছে। এ কারণে আমাদের জাতীয় জীবনে বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

এখনও আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। আমাদের ঋতুবৈচিত্র্য, খাদ্যসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রভাব স্বমহিমায় বিদ্যমান রয়েছে এবং থাকবে।

বিশ্বায়নের যুগে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ক্রমে বৈদেশিক বাণিজ্যনির্ভর হয়ে উঠলেও পহেলা বৈশাখের উৎসবমুখর আবাহন বাড়তি জৌলুস সৃষ্টি করেছে।

বাংলা নববর্ষ পালন এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামীণ জনপদে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা এবং কৃষকের ঘরে নতুন ফসল উঠার এ সময়ে নববর্ষ উদযাপনে বৈশাখী মেলা হয়ে উঠত সব বয়েসী মানুষের আনন্দ-উৎসব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নতুন উপলক্ষ। এখনও তার আবেদন স্বমহিমায় উজ্জ্বল।

আমরা জানি, একেক দেশের একেক জনগোষ্ঠীর ও সমাজের সংস্কৃতি আলাদা। এ কারণে বিশ্বজুড়ে সংস্কৃতিক বৈচিত্র আমরা লক্ষ্য করি। তাই স্বাধীন দেশের নাগরিকেরা তাদের ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের বর্ষবরণের উৎসব পালন করবে, এটাই প্রত্যাশিত।

দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। দেশে অনেক উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, মানুষের নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটছে। মাদক, যৌন হয়রানি, পারিবারিক কলহে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, নৃশংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন বছরে প্রত্যাশা থাকবে এসব বন্ধ হোক। ঘরে ঘরে শান্তি নেমে আসুক।

কারণ, আমরা যতই উন্নয়ন করি না কেন, যদি নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় চলতে থাকে, তবে তা অর্থহীন হয়ে পড়তে বাধ্য। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, উন্নয়ন মানুষের জন্য। এ

খন সেই মানুষের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিলে সমাজ, পরিবার সর্বোপরি দেশে অরাজকতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তাই উন্নয়নকে টেকসই ও সুষম করে তুলতে মানুষের মধ্যকার নীতি-নৈতিকতা এবং জ্ঞান চর্চার অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে।

এক্ষেত্রে সরকার ও সমাজের অভিভাবক শ্রেণীসহ সচেতন মহলকে আরও সচেতন হতে হবে। এবারের নববর্ষ দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ ও সাফল্য বয়ে আনুক, আমরা তা প্রত্যাশা করি। কামনা করি, অতীতের ভুল-ভ্রান্তি, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মানুষ নবপ্রেরণায় নতুন করে জীবনকে বিকশিত করুক।


শর্টলিংকঃ