অধ্যাপক শফিউল হত্যা মামলায় তিন আসামির ফাঁসি


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলায় তিন জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অপর আট আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে  জনাকীর্ণ আদালতে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার রায় এ রায় পড়ে শোনান।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাবির সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুস সামাদ পিন্টু, আরিফুল ইসলাম মানিক ও লুৎফুল ইসলাম সবুজ। এর মধ্যে সবুজ পলাতক রয়েছেন।

আর খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আক্তার রেশমা, সিরাজুল ইসলাম কালু, আল-মামুন, সাগর, জিন্নাত আলী, ইব্রাহীম খলীল ও আরিফ।

এদিকে, মামলার রায়ে অসন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শফিউলের ছেলে সৌমিন শাহরিদ জেভিন। তিনি বলেন, ‘মামলার পর তদন্তে গাফিলতি করা হয়। আমি আদালতকে নয়, বরং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার প্রতি অনাস্থা জানাচ্ছি। মামলার তদন্ত যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, তা ছিটেফোঁটাও হয়নি।’ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল এবং পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করবেন বলে জানান তিনি।

রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক জানান, ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ড. শফিউল ইসলাম লিলনকে।

পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মুহাম্মদ এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনার পর লালন ভক্ত ড. শফিউল ইসলামকে ধর্ম অবমাননাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে হত্যার দায় স্বীকার করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২।

ফেসবুক পেজে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিবৃতিও দেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি পুলিশ।

তদন্ত শেষে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই মামলার চার্জশিটে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখায় কর্মরত নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে শফিউল ইসলামের দ্বন্দ্বের জের ধরেই তার স্বামী যুবদল নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু অন্যদের নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে রেশমাও বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই বছরেরই ২৩ নভেম্বর যুবদল নেতা আব্দুস সামাদ পিন্টুসহ ছয় জনকে ঢাকা থেকে আটক করে র‌্যাব। পরে পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আখতার রেশমাকে আটক করে গোয়েন্দা শাখা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে রেশমা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত প্রাঙ্গণে ভীড়

ঘটনার এক বছর পর ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক রেজাউস সাদিক আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

এতে রাজশাহী জেলা যুবদলের তৎকালীন আহ্বায়ক জেলা বিএনপির বর্তমান যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জলসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এই মামলার একজন ছাড়া ১০ আসামি বর্তমানে জামিনে ছিলেন।

গত ১৩ মার্চ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় মোট ৩৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরে  রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটার আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি জানান। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জানান, মামলায় আসামিরা যে জড়িত রাষ্ট্রপক্ষ তা প্রমাণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।

ফলে রায়ে আসামিরা বেকসুর খালাস পাওয়ার দাবি রাখে। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ১৫ এপ্রিল চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাব্যুনাল আদালতের বিচারক। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আজ এই রায় ঘোষণা করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন, আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু। আসামি পক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট মো. একরামুল হক, মিজানুল ইসলাম, আবু বাক্কার, রাইসুল ইসলাম ও আব্দুল মালেক রানা।


শর্টলিংকঃ