আন্তর্জাতিক ডলার প্রতারকচক্রের ফাঁদে রাজশাহীর তরুণরা


এমএ আমিন রিংকু :

রাজশাহী নগরীর মতিহার এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী বুলবুল ফেসবুকে একটি গ্রুপে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সিয়াম আহমেদ নাহিদের সাথে। নাহিদ তার ‘ইথেকয়েন’ নামে একটি স্টার্টআপ কোম্পানিতে বুলবুলকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে। মাসিক বেতন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। চাকরির এমন লোভনীয় প্রস্তাব দেখে আর কিছু ভাবেন নি। কিন্তু তখনো বোঝেননি তিনি ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এরপরই সব হারিয়ে তিনি এখন সর্বস্বান্ত।

বুলবুল জানান, চলতি মাসের প্রথম দিকে সিয়াম আহমেদ নাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ম্যাসেঞ্জারে। নাহিদ তাকে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটাতে থাকেন। ইথেকয়েন কোম্পানিকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। এটা মূলত ডলার বেচাকেনার প্ল্যাটফর্ম। নাহিদ দুদিনের মাথায় কুড়ি হাজার টাকা বেতনে ইথেকয়েনে এজেন্টের চাকরি দেয় বুলবুলকে। বুলবুলকে কাজ দেওয়া হয় রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভার্চুয়াল ডলার ক্রয়ের।

নাহিদ প্রথম কাজ হিসেবে ডলার কিনতে বুলবুলকে পাঠায় গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জে। নাহিদের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে তিন বিক্রেতার কাছে থেকে দুইশত মার্কিন ডলার ট্রান্সফার করেন ইথেকয়েনের স্ক্রিল একাউন্টে। বুলবুলের পাঠানো ডলার বুঝেও নেন নাহিদ। এরপরই বুঝে পাওয়া ডলারের দাম পরিশোধ না করেই মুহূর্তেই বুলবুলকে ফেসবুকে ব্লক করে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় নাহিদ।


ডলার বিক্রেতারা টাকা না পেয়ে জিম্মি করে বুলবুলকে। এক দিনের মাথায় বাবা মার কাছ থেকে বিকাশে কুড়ি হাজার টাকা নিয়ে তিন বিক্রেতাকে পরিশোধ করে বুলবুল।এর পরথেকেই বুলবুলের মোবাইল বন্ধ পান তার পরিবারের সদস্যরা।

গেল ১১ অক্টোবর রাতে নগরীর মতিহার থানায় অভিযোগ দেন বুলবুলের পরিবার। পরদিন সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে তদন্তভার দেওয়া হয় রাজশাহী মেট্রপলিটন পুলিশের নবগঠিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে। প্রযুক্তির সহয়তায় ২৪ ঘণ্টার ভেতরে জিম্মি হওয়া বুলবুলকে উদ্ধার করেন তারা।

প্রতারণার শিকার বুলবুল জানান, ’অনেক স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। আমি এত বড় ফাঁদে পা দিয়েছি সেটা বুঝতে পারিনি। টাকার জন্য আমাকে তারা অনেক নির্যাতন করেছে। পুলিশ আমাকে উদ্ধার না করলে আমার সাথে কী হতো সেটা আমি কল্পনাও করতে পারছি না’।

বিষয়ে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ইনচার্জ সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) উৎপল কুমার চৌধুরী বলেন, চক্রটি যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনলাইনে ডলার কেনাবেচার নামে প্রতারণা করছে। তারা যে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে সেগুলো ফেইক বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মূল প্রতারক সিয়াম আহমেদ নাহিদকে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। মূলত তার ফাঁদে পা দেওয়া প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষদের মোবাইল নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য ব্যবহার করে ডিজিটাল মাধ্যমে নিজেকে আড়াল করার কারণে তাকে চিহ্নিত করতে পুলিশের বেগ পেতে হচ্ছে। তবে মূল প্রতারককে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ধরনের প্রতারণার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক খোলা কাগজকে জানান, প্রতিদিন নতুন নতুন ধরণের সাইবার ক্রাইম হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে এসব অপরাধীদের ডিজিটাল ডাটাবেইজ তৈরি করছি। এই ডাটাবেইজে এসব অপরাধীদের ছবিসহ বিস্তারিত থাকবে। আগামীতে কেউ যাতে অনালাইনে এভাবে প্রতারিত না হন সেজন্য ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারনারও উদ্যোগ গ্রহণ করছি।

 


শর্টলিংকঃ