আমদানি বিকল্প শিল্প হিসাবে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল খাতে বিপ্লব


ইউএনভি ডেস্ক:

বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজার এক সময় পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। আর আমদানির ক্ষেত্রে ভারত ছিল সবথেকে বড় উৎস। প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা চলে যেত বিভিন্ন ব্রান্ডের মোটরসাইকেলের আমদানিতে।কিন্তু সাইকেলের পর এবার মোটরসাইকেল শিল্পেও বিপ্লব হয়েছে বাংলাদেশে। দেশের বাজারে পাওয়া যায় এরকম প্রায় সব ব্রান্ডের মোটরসাইকেল তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতেই।

বাংলাদেশের মোটরসাইকেল কোম্পানি

ইতোপূর্বে ওয়ালটনের মত বেশ কিছু কোম্পনি মোটরসাইকেল কারখানা করলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পাওয়ায় টিকে থাকতে পারেনি। তবে সেই গল্প ভিন্ন দেশের একমাত্র দেশীয় মোটরসাইকেল ব্রান্ড রানার এর ক্ষেত্রে।

২০১২ সালে রানার অটোমোবাইলস রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে। ময়মনসিংহের ভালুকায় তাদের নিজস্ব কারখানায় কোম্পানি মোটরসাইকেল উৎপাদন করে আসছে।।

দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বর্তমানে নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি হচ্ছে রানারের মোটরসাইকেল। তাদের পণ্যের উচ্চমান তাদের বাজার ধরে রাখার ক্ষেত্রে ভাল ভূমিকা রেখেছে। তারা শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে রপ্তানির সম্ভাবনা যাচাই করছে।

গত বছর দেশে প্রথমবারের মতো ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমোদন পায় রানার। উচ্চ সিসি যুক্ত মোটরসাইকেল গুলি তারা নেপালে রপ্তানি করছে। এখন তারা ১৪টি মডেলের মোটরসাইকেল তৈরি করছে।

 

বিদেশি কোম্পানির বাংলাদেশে কারখানা

বিদেশি কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশে সব থেকে চাহিদা রয়েছে যেসব কোম্পানির সেগুলা হল-

১. বাজাজ

২. টিভিএস

৩. হোন্ডা

৪. হিরো

৫. ইয়ামাহা

৬. সুজুকি

বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্যের পলিসি এমন ভাবে করা হয়েছে যে বিদেশ থেকে মোটরসাইকেল আমদানি করতে গেলে উচ্চহারে ট্যাক্স দিতে হয়।দেশের মোটরসাইকেলের বাজার অনেক বড়। ২০১৮ সালে দেশে মোটরসাইকেল বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। যদিও আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে পণ্যটি বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ। চিন্তা করুন ২০১৬ সালে যে পরিমান মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে ২০১৮ সালে তার থেকে ৪৪% বেশি হয়েছে বলা যায় প্রায় দ্বিগুন।

২০১৮ সালে দেশে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার! এত বিশাল বাজার ধরতে বড় ব্রান্ড গুলি বাধ্য হয়েছে এদেশে কারখানা করতে। আসুন এবার এদের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

বাজাজের কারখানা বাংলাদেশে:

দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে সবচেয়ে বেশি হিস্যা ভারতের বাজাজ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের। উত্তরা মোটরস ১৯৮৫ সালের দিকে বাজাজের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে আনা শুরু করে।

এখন দেশেই বাজাজের মোটরসাইকেল উৎপাদিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে উত্তরা মোটরস সাভারের জিরানিতে তাদের নতুন কারখানায় মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে। সেখানে এখন তিনটি জনপ্রিয় মডেল বাজাজ পালসার, ডিসকভার ও প্লাটিনা উৎপাদিত হচ্ছে। শিগগিরই শুরু হবে সিটি ১০০ ও ডিসকভার ১১০ মডেলের মোটরসাইকেলের উৎপাদন।

টিভিএস এর কারখানা:

বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারের হিস্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ভারতীয় ব্র্যান্ড টিভিএস। দেশে টিভিএস ব্র্যান্ডের বাজারজাত করে সনি-র‌্যাংগস গ্রুপ। এখন দেশেই মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে টিভিএস। সনি-র‌্যাংগসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিয়ান মোটরস ও ভারতের টিভিএস অ্যান্ড সন্সের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানির নাম টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড।

তাদের কারখানা গাজীপুরের টঙ্গীতে।একসময় জাপানের সুজুকির সঙ্গে ভারতে যৌথ উদ্যোগের কারখানা ছিল টিভিএসের। পরে সুজুকি আলাদা হয়ে যায়।

জাপানিজ হোন্ডা এখন আবদুল মোনেম ইকনোমিক জোনে

জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশন বাংলাদেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরুর পর এ দেশে তাদের ব্যবসা দ্রুত বাড়ছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় বেসরকারি আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনে ২৫ একর জমিতে হোন্ডা বাংলাদেশ লিমিটেডের (বিএইচএল) কারখানা তাদের জনপ্রিয় বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল তৈরি করছে। ।

এ কারখানায় আপাতত বছরে এক লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করেছে হোন্ডা, যা ২০২১ সালে দুই লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

বিশ্বের ১৬০টি দেশে ব্যবসা করে হোন্ডা মোটর করপোরেশন। এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ১০টি দেশে তাদের কারখানা রয়েছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশে কারখানা করেছে হোন্ডা।

জাপানের ইয়ামাহার কারখানা এখন বাংলাদেশে

বাংলাদেশেই জাপানের সুপরিচিত ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজনের কারখানা করেছে এসিআই মোটরস। শুধু সংযোজন নয়, একই কারখানায় ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে।এসিআই কারখানাটি করেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে। কারখানার জমির মোট পরিমাণ ৬ একর।

জাপানিজ সুজুকি বসে নেই

মোটরসাইকেলের আরেকটি জনপ্রিয় জাপানি ব্র্যান্ড সুজুকিও উৎপাদিত হয় বাংলাদেশেই। এ দেশে সুজুকির পরিবেশ কর‌্যানকন মোটর বাইক লিমিটেড (আরএমবিএল)। সুজুকি ও র‌্যানকন মিলে গাজীপুরে কারখানা করেছে। সুজুকি বাংলাদেশ ও র‌্যানকন মোটরবাইক এর বাংলাদেশে তাদের কারখানায় জমির পরিমাণ ৩৭ একর। এটি দেশের সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী কারখানা। এতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা।

যশোরে কারখানা করেছে হিরো

ভারতের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিরো মোটোকর্পের হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলও বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এ দেশে হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত করে নিলয় মোটরস, যেটি নিটল-নিলয় গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।

বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে হিরোই বাংলাদেশে সবার আগে উৎপাদন শুরু করে। নিটল-নিলয় গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে কারখানা করেছে হিরো মোটোকর্প। যশোরের কারখানায় বছরে দেড় লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে সক্ষম। কোম্পানির নাম এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেড।


শর্টলিংকঃ