আমলযোগ্য অপরাধে মামলা করেনি পুলিশ


ইউএনভি ডেস্ক:

রংপুর নগরীতে আইআরডিপি’র (ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) প্রধান নির্বাহী মোস্তফা কামাল রাসেল প্রতারণার মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তার বিরুদ্ধে বগুড়ার আদমদীঘি থানায় পৃথক একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সে মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। পুলিশের নথিতে তিনি এখনো পলাতক আসামি।

এরপরও রংপুর নগরীতে প্রকাশ্যে অপকর্ম চালিয়ে এলেও তা পুলিশের নজরে আসেনি। যুগান্তরে এ নিয়ে খবর প্রকাশ হলে প্রশাসনের টনক নড়ে। তার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ডিবি পুলিশ ১০ জনকে আটক করে। তবে ওই সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান আশেক আলীসহ আটকদের বিরুদ্ধে কোনো আমলযোগ্য অপরাধে মামলা করা হয়নি। আটকদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাইবান্ধায় নকশী নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে সেখানে লোকজনকে প্রতারিত করেন তিনি। এ নিয়ে থানায় মামলা হলে সে মামলায় আদালত তাকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইরকম প্রতারণার মামলায় তার বিরুদ্ধে আদমদীঘি থানায় পৃথক একটি মামলা বগুড়া জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিবুজ্জামান বসুনিয়া।

এর পর গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি ছেড়ে রংপুরে এসে আস্তানা গাড়েন। ১০ লাখ পুঁজি ব্যাংকে গচ্ছিত দেখিয়ে তিনি রংপুর বিভাগের ৫৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে কমিউনিটি হেলথ কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু করেছেন প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে। অথচ তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন প্রায় ৩ মাস ধরে পাওনা রয়েছে। ওই নির্মাণকাজে ব্যয় করছেন বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে চুক্তিনামা অনুযায়ী ছয় শতক জমি কেনাসহ দ্বিতলবিশিষ্ট পাকাঘর নির্মাণ ব্যয় প্রতিটির ধরা হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা। তিন বছর মেয়াদি ওই নির্মাণকাজ শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করার কথা। এখনো তিনি কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করতে পারেননি।

শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সংসদ-সদস্য, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের যুক্ত করে রংপুর নগরীতে আইআরডিপি নামে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এমন তথ্য মিলেছে। যুগান্তরের হাতে যেসব নথি এসেছে তাতে দেখা গেছে, মেসার্স ফারুক ট্রেডার্স রংপুরে ৭৫টি, এসএল করপোরেশেন গাইবান্ধায় ৭৩টি, প্রতিমা কনস্ট্রাকশন ও যোগেশ এন্টারপ্রাইজ রংপুরের তারাগঞ্জে পাঁচটি, জাহাঙ্গীর এক্স এস নীলফামারীতে ৩৩টি, মা ট্রেডার্স পীরগঞ্জে সাতটি, স্টার পাথ হোল্ডিং দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ১১টি, খায়রুল কবীর রানা রংপুরের পীরগাছায় দুটি, এসপিডি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান লালমনিরহাট জেলায় ৪০টি কমিউনিটি হেলথ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পেয়ে তারা নির্মাণকাজ শুরু করেছে।

এ নিয়ে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, এ বিষয়ে তার দপ্তরে কোনো তথ্য নেই। বিধি অনুযায়ী স্বাস্থ্য-চিকিৎসাসেবা বা হেলথ কমপ্লেক্স নির্মাণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও চুক্তি থাকতে হবে। এছাড়া একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নথিপত্রে সরকারের লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

যুগান্তরে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এনএসআই (জাতীয় গোয়েন্দ সংস্থা) ও ডিবি পুলিশ সংস্থাটির কার্যালয়ে সোমবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত নথিপত্র উদ্ধার ও ১০ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো আমলযোগ্য অপরাধে মামলা না করে কেবল ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশের ডিসি কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বলেন, এ ঘটনায় মামলা করার জন্য কোনো বাদী না পাওয়ায় এ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে কেউ বাদী হলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হক প্রামাণিক বলেন, আইআরডিপি’র কার্যক্রম জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক। সরকারের মনোগ্রাম ব্যবহার করে সরকারের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল রাসেলসহ তার সহযোগীরা আইনের ভাষায় আমলযোগ্য অপরাধ করেছেন। সে কারণে কোনো বাদী পাওয়া না গেলে পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ঘটনার বাদী হয়ে মামলা করতে পারত।


শর্টলিংকঃ