‘আর্থিক ক্ষতি’ রোধে রাবিতে কাটা হচ্ছে পুরোনো গাছ


রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গাছ কেটে ফেলছে প্রশাসন। সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের ৫টি পুরোনো মেহগনি গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে।

রাবির বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে কেটে রাখা হয়েছে পুরোনো মেহগনি গাছটি

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- ‘এতে ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের দাবি- ‘যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে, তা অনেক পুরোনো এবং মৃতপ্রায় অবস্থা। আরও কিছুদিন এভাবে থাকলে সেগুলোর আর্থিক মূল্যমান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি রোধ করতে এখন গাছগুলো কাটা হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাবি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১২ থেকে ১৩ লাখ বৃক্ষ রয়েছে। যা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন ও গবেষণা কাজে সহায়ক। তবে গত কয়েক বছরে সৌন্দর্যবর্ধন ও পুরোনো হওয়ার দাবি করে কমপক্ষে চার শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল কালবৈশাখীতে কিছু গাছ ভেঙে পড়লে, সুযোগ বুঝে দুই শতাধিক গাছ কাটা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৭৫-৮০টি ভালো গাছ কাটা হয় বলে সেই সময় অভিযোগ ওঠে। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বনায়ন প্রকল্প থেকে ছোট-বড় প্রায় দেড় শতাধিক গাছ কেটে নেয় স্থানীয়রা। এ ঘটনায় মামলা হলেও পরে প্রশাসনের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।

রাবির বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে গাছ কাটা হচ্ছে

২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কৃষি প্রকল্প বিভাগের স্থানীয় বাসিন্দা মিলনের কাছে ১৫টি পুরনো গাছ বিক্রয় করে প্রশাসন। তবে ব্যবসায়ী মিলন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ২৯টি গাছ কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে তিন দফা টেন্ডারে মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী মাঠের দক্ষিণ পাশের প্রায় ৭৫টি ইউক্যালিপ্টাস গাছ বিক্রয় করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জুবেরী মাঠের পাশে শেখ রাসেল স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য ওই গাছ কাটা হয় বলে জানায প্রশাসন।

এদিকে, একের পর এক গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, গাছ কাটার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে পাখির অভয়ারণ্যখ্যত রাবি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন শিক্ষার্থী জানান, স্থাপনা নির্মাণের নামে বিভিন্ন সময় গাছ কাটা হয়ে থাকে। তবে এখন যেগুলো কাটা হচ্ছে, সেখানে কোনো স্থাপনা হবে বলে জানা নেই। তাহলে প্রশাসন কেনো এখন এসব গাছ কাটছে, তা তাদের কাছে বোধগম্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নিশিথ কুমার পাল বলেন, ‘পুরোনো গাছগুলো যদি ঝুঁকিপূর্ণ না হয়, তাহলে কাটা ঠিক নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে, সেগুলো অনেক পুরনো এবং মারা যাওয়ার অবস্থায়। একেবারে মরে খড়ি হলে বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য এগুলো কাটা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনায় রেখেছি। পরিবেশের ওপর যেন প্রভাব না পড়ে, সেই চিন্তা করে নতুন গাছ লাগানো হবে। গত বছর কৃষি প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় হাজার গাছের চারা লাগানো হয়েছে। আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।’


শর্টলিংকঃ