করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন, বিল গেটসের উত্তর


ইউএনভি ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বাড়াতে লক ডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন বিল গেটস। একই সঙ্গে দ্রুত ব্যাপকহারে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এ ধনকুবের মনে করেন, লক ডাউন বা এর চেয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত যত দ্রুত নেওয়া যাবে, ততো পরিস্থতির উন্নতি হবে।

মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ছবি : ইন্টারনেট
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ছবি : ইন্টারনেট

বিল গেটস গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটের একটি সেশনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, ভ্যাকসিন তৈরির অবস্থা, করোনা মোকাবিলার উপায়সহ নানান বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

এগুলোর মধ্যে বাছাই করা প্রশ্ন ও উত্তর টেকশহরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে। শনিবার প্রথম পর্ব প্রকাশের পর আজ থাকছে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।

বর্তমান মহামারিতে আপনাদের ফাউন্ডেশন কিভাবে সাহায্য করছে? স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পণ্য তৈরি করছেন?

বিল গেটস : আমাদের ফাউন্ডেশন সবার সঙ্গে মিলে কাজ করছে। তারা ডায়াগনসিস, থেরাপিউটিকস ও ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রাধান্য দিয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, প্রতিটি দেশ এসব সরঞ্জাম ব্যবহারের সুবিধা পাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছি বিভিন্ন কাজের জন্য। এর বাইরে আরও বেশি কিছু করার চেষ্টা করছি।

আমরা থেরাপিউটিক ও ভ্যাকসিনের উৎপাদন সক্ষমতা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রাধান্য দিতে চাই। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়ােজনীয় অনলাইন রিসোর্স তৈরি করা হচ্ছে।

ভেন্টিলেটর উৎপাদনের জন্য আপনি কিছু করতে পারেন কী?

বিল গেটস : এসবের জন্য অনেক শ্রম দিচ্ছি। শুধু সামাজিক দূরত্ব বা শাট ডাউন ঠিক মতো করতে পারলে এ ভাইরাস প্রতিরোধ করা খুব সহজ। আমাদের ফাউন্ডেশনের দক্ষতার জায়গা ডায়গনেস্টিকস, থেরাপিউটিকস ও ভ্যাকসিন। এ জন্য তারা কাজ করছে। আমার মনে হয় এটি ভেন্টিলেটর উৎপাদনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

জাতীয় আশ্রয় কেন্দ্র থাকা উচিত নয় কী।

বিল গেটস : এ অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতে অবস্থান করা উচিত। যাদের বাড়িতে থাকার মতো অবস্থা নেই; কাজের কারণে বাইরে থাকতে হচ্ছে তাদের জন্যও একটা জায়গা থাকা দরকার। যদি টেস্ট কিট কোনোভাবে বাড়িতে পাঠানো যায়, তাহলে তাদের আর বাইরে আসার প্রয়োজন হবে না। আমি আবারও বলছি, যুক্তরাষ্ট্র এখনও রােগ পরীক্ষার জন্য সংগঠিত হতে পারেনি।

সামাজিক দূরত্বের সময় ব্যবসায়ীরা কিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবেন?

কোন ধরনের ব্যবসা এখন চলবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অবশ্যই খাবার ও স্বাস্থ্য সেবা খাতের সব ধরনের কার্যক্রম আমাদের দরকার। একই সঙ্গে পানি, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটও চাই। এমন সঙ্কটময় মুহূর্তে এসব সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোনটি এখন প্রয়োজন সেটি দেশগুলোকে বুঝতে হবে।

এমনকি আমাদের একটা ডিজিটাল সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা থেকে যারা সেড়ে উঠেছেন, কাকে সাম্প্রতিক পরীক্ষা করা হয়েছে কিংবা যখন ভ্যাকসিন আসবে তখন কে ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন সনদ থাকা দরকার।

কবে নাগাদ সঙ্কটের অবসান হতে পারে।

বিল গেটস : বিশ্বব্যাপী এটি কমিয়ে আনার জন্য ভ্যাকসিন চাই। অনেক ধনী দেশ হয়তো এটা ছড়ানো রোধ করে আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারবে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে তা সম্ভব না। সেসব দেশের জন্য হলেও আগে ভ্যাকসিন লাগবে। একটি গ্রুপ আছে ‘জিএসিক্স’ নামে। তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন কিনতে চায়। এভাবে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।

এমন নাভিশ্বাস অবস্থা কত দিন চলবে?

বিল গেটস : এটা নির্ভর করে দেশগুলোর উপর। চীনে এখন খুবই অল্প আক্রান্ত হচ্ছেন। কারণ তাদের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা ও শাট ডাউন ছিল খুবই কার্যকর। কোনো দেশ যদি কার্যকরভাবে পরীক্ষা ও শাট ডাউন করতে পারে তাহলে ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যে এমন সংক্রমণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যাবে।

শাট ডাউন শেষে নতুন সংক্রমণ হতে পারে না?

বিল গেটস : এটি নির্ভর করে অন্য দেশ থেকে আসা মানুষের সঙ্গে কিভাবে ডিল করা হচ্ছে এবং পরীক্ষা করতে কতোটা জোর দেওয়া হয়েছিল তার ওপর। এখন পর্যন্ত চীনে পুনরায় আক্রান্তের পরিমাণ খুব কম। তারা এখন কাউকে প্রবেশ করতে দিতে খুবই কঠোর নীতি অবলম্বন করেছে। হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর এই সময়ে খুব ভালো কাজ করতে পেরেছে। আমরা যদি সঠিকভাবে সব করতে পারি তাহলে পুনরায় আক্রান্তের পরিমাণ পাওয়া যাবে না।

পরবর্তী কয়েক মাসে আক্রান্তের পরিমাণ কেমন হতে পারে?

বিল গেটস : পুনরায় সংক্রমণের ঘটনা খুব বেশি পায়নি চীন। দক্ষিণ কোরিয়াতেও এখন সবকিছু সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে। পরীক্ষায় পজিটিভ হলে দ্রুত আইসোলেশনে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের অর্থনৈতিক ইমপ্যাক্ট কতখানি? ফাইন্ডেশন কি সরাসরি মেডিকেল সহায়তার পাশাপাশি আর কিছু করছেন?

বিল গেটস : ফাউন্ডেশন যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয় নিয়ে কাজ করছে। অন্যান্য সামাজিক কাজগুলো করার জন্য অসংখ্য সংগঠন আছে। আমি নিশ্চিত তারা সেসব বিষয়ে সতর্ক আছে। আমরা এখন জানি, করোনা পরীক্ষায় পজিটিভদের ভিন্ন করে আইসোলেট করা, তাদের খাবার এবং যে ধরনের ওষুধ দরকার সেদিকে জোর দেওয়া প্রয়োজনের বিষয়টি।

আমার এক বন্ধু এনএইচএসের চিকিৎসক। গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত সে মাস্ক ছাড়াই কাজ করেছে। তাহলে এত মাস্ক কে মজুদ করলো?

বিল গেটস : এটি শুনে আমি খুব কষ্ট পেলাম। সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তার এটাই একটা উদাহরণ। তাহলে এমন সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাবে। এজন্য টেস্টিং নেটওয়ার্ক এবং ডেটাবেইজ তৈরি ও সেটা দ্রুত রান করার ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি একটি নথির উদ্ধৃতি দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে এটি ১৮ মাসের মধ্যে আবার ফিরতে পারে। সে সম্পর্কে কি বলবেন?

বিল গেটস : কি ঘটতে যাচ্ছে তার অনেক ধরনের মডেল দেখা যাচ্ছে। নিবন্ধটি ইনফ্লুয়েঞ্জা সম্পর্কিত। ফলে এখন যা ঘটছে, সেটি চীনে কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার ঘটনার সঙ্গে মেলানো যায় না। আমাদের ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

চীন থেকে যে খবর আসছ সেটি আপনি বিশ্বাস করেন। ঠিক এ মুহূর্তে।

বিল গেটস : চীন অনেক পরীক্ষা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়াও খুব ভালো করেছে। চীন যদি শুরুতে বা জানুয়ারিতে খুব সতর্ক হয়ে বিষয়টিতে নজর দিত তাহলে আক্রান্ত এত হতেই পারত না। যুক্তরাষ্ট্রের এখন উচিত একটা সংগঠিত টেস্টিং সিস্টেম গড়ে তোলা, যে জন্য আমরা কাজ করছি।

আমি দাদা-দাদিকে নিত্যপণ্য পৌঁছে দিতে যাই। সেক্ষেত্রে সতর্কতা হিসেবে কী করা যায়।

বিল গেটস : হাত ধোয়া অব্যাহত রাখবেন। দূরত্ব বজায় রাখবেন। আপনার জ্বর বা কাশি থাকলে এটা মানা অত্যাবশ্যক।

আমরা এখনও কেন লক ডাউনে যাচ্ছি না।

বিল গেটস : আমরা লক ডাউনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছি। আমাদের খুব শিগগির আরও কঠোর হওয়া উচিত। এটা করতে পারলে সংক্রমণের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে আনা যাবে।

সঙ্কট পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কিভাবে করা সম্ভব হবে।

বিল গেটস : অবশ্যই উত্তরণ করতে হবে। শাট ডাউনের প্রভাব অর্থনীতিতে খুব বড় হতে যাচ্ছে। বিকল্প কিছু বা ব্যাকআপ পরিকল্পনা রাখতে হবে।

এ মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে কত সময় লাগবে। ভবিষ্যতের আরও কিছুর জন্য কতটা প্রস্তুত আমরা।

বিল গেটস : আমি মনে করি এটি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সরকার এবং অন্যান্যরা ভবিষ্যতের জন্য বড় আকারে বিনিয়োগ করবে। সবাই মিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার জন্য কাজ করতে হবে। একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে থেরাপিউটিস, যেটা রোগ সারাতে বিশ্বকে সাহায্য করতে পারে। ভাইরাস কোনো জাতীয় সীমানা মানে না।


শর্টলিংকঃ