করোনায় রাবিতে মড়কের অজুহাতে গাছ কেটে সাবাড়!


নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটক হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ পথে নজর কাড়তো সড়কের মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি পাম-ট্রি। তবে সে গাছগুলো এই করো না ছুটির মধ্যে কেটে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে গাছগুলোতে মড়ক লাগার অজুহাত দেখিয়ে কাটা হয়েছে।

এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নিয়েছিল। পাম-ট্রি কাটার বিপক্ষেও অবস্থান নিয়েছিলেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। বিশেষ করে সাবেক শিক্ষার্থীরা গাছগুলো নিয়ে বেশি আবেগাপ্লুত। তাদের মনোভাবের কারণে বারবার সিদ্ধান্ত নিয়েও পাম-ট্রি কেটে ফেলা থেকে পিছু হটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্প ও সৌন্দর্যবর্ধন কমিটি।

তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকার সুযোগে পাম-ট্রিগুলো কেটে ফেলেছে প্রশাসন। পাম-ট্রি কেটে ফেলে রাখার সেই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেন। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছবিগুলো পোস্ট করে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

রাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম.এ.কে আজাদ তাঁর ফেসবুকে গাছ কেটে রাখার বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘করোনা তোদেরকেও বাঁচতে দিল না! আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের তথা প্রশাসন ভবনের সামনে সারি সারি দাঁড়ানো পাম গাছ গুলি কেটে ফেলা হলো। জানিনা তাদের কী অপরাধ ছিল। নাকি তারা করোনা প্রতিরোধে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বহু বছর ধরে কালের স্বাক্ষী এরা। আর কোন দিন তোদের দেখা হবে নারে! ক্ষমা করিস তোরা!’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাহনাত মাসুম বাবু লিখেছেন, ‘…বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটের ভেতরে থাকা পামগাছগুলো উজাড় করা শুরু করেছে! বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গাছ কাটা হচ্ছে আর উপাচার্য এটা জানেন না! এটা কি সম্ভব?’
একই বিভাগের সাবেক আরেক শিক্ষার্থী বাঁধন অধিকারী ওই পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ‘ইশরে! কান্না লাগতেছে গাছগুলোকে কী নির্মমভাবে লাশ বানিয়ে শুইয়ে দিয়েছে রাক্ষসগুলো।’

পাম-ট্রি কাটায় প্রশাসনের সমালোচনায় মুখর সবাই। তবে প্রশাসনের বক্তব্য ভিন্ন। প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, সেখানে যে গাছগুলো ছিল, তাতে মড়ক লেগেছিল। সাদা ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ছিল। কৃষি প্রকল্প সকল নিয়ম মেনে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। একই জায়গায় ফিস্টেল পাম-ট্রি লাগানো হবে।

কৃষি প্রকল্প দেখভাল করেন রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘যারা ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করেন- সকলে জানেন ওই গাছগুলোর দশা। সড়কের মাঝে ফিস্টেল পাম-ট্রি ছিল। সেগুলোতে অজ্ঞাত কারণে ছত্রাক লেগেছিল। একটি থেকে আরেকটি করে প্রায় সকল পাম-ট্রিতে ছড়িয়ে পড়ে।’

উপ-উপাচার্য বলেন, ‘শুধু পাম-ট্রি নয়, আশেপাশে থাকা অন্য গাছেও এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ছিল। আমরা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের সাথেও কথা বলেছি। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- সেখানে এই বর্ষাতে বোটল পাম-ট্রি রোপণ করা হবে। যা দ্রুত বেড়ে উঠবে। লম্বা ও সৌন্দর্যে এই গাছগুলোর মতোই হবে।’

অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ তাই আমরা এগুলো কেটে বিক্রি করে দিচ্ছি বিষয়টি এমন নয়। এগুলোর কাঠের মূল্যও ব্যাপক নয়, যে প্রশাসন তা বিক্রি করে লাভবান হবে। হ্যাঁ, গাছগুলো যারা ক্যাম্পাসে দেখে গেছেন বা দেখতে অভ্যস্থ, তাদের আবেগের জায়গা থেকে খারাপ লাগবে। সেটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বাস্তবতাও দেখতে হবে। কেন আমরা কাটছি, সেটা না জেনে সমালোচনা করাটা উচিত নয়।’

পাম-ট্রি কেটে ফেলার বিষয়ে উপ-উপাচার্যের ছত্রাক লাগা বক্তব্যের সাথে একমত নন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গাছগুলো এতোদিন সৌন্দর্য ছড়ালো, সেগুলোর পরিচর্যা করা যেত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেত। গাছের গোঁড়া খুঁড়ে সার-পানি দিলে নতুন করে সবুজ হয়ে উঠতে পারতো। এতে গাছগুলো আবার সজিব হয়ে উঠতো’।


শর্টলিংকঃ