করোনার ভ্যাকসিন কারা পাবে প্রথমে?


ইউএনভি ডেস্ক:

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত অনুমোদিত হয়ে গেল, কে প্রথমে এটি পাবে? উন্নত দেশগুলোর সাথে সাথেই কি দরিদ্র দেশগুলোতেও ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে?

মানবদেহে করোনার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু

বিশ্বের সব বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের শেষ পর্যায়ে। কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পরই অনুমোদন দেওয়া হবে ভ্যাকসিনের।

তবে যে ভ্যাকসিনটি মানবদেহে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ এবং কার্যকর প্রমাণিত হবে সে ভ্যাকসিনটিই করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে। এক্ষেত্রে দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ভ্যাকসিনের সরবরাহ ও প্রাপ্তি নাগালের মধ্যে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সকলের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এবং বৈশ্বিক সমন্বয় রাখতে গাভি (গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) কাজ করবে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. শেঠ বার্কলে পরবর্তী বড় চ্যালেঞ্জ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সর্বজনীন বণ্টন ও সরবরাহ নিশ্চিতের বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পাশাপাশি বিশ্বের দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ভ্যাকসিনের অ্যাক্সেস কীভাবে নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত মতামতও জানান।

তিনি বলেন, ‘স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর পাশাপাশি উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে করোনা-১৯ ভ্যাকসিনের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে আমাদের এখন সহায়তা প্রয়োজন।’

প্রশ্ন: দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন অ্যাক্সেসের অর্থায়ন কীভাবে হবে?

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) যুক্তরাজ্য দ্বারা আয়োজিত গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিটে বিশ্ব নেতারা ৮.৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে। এই সহায়তা তহবিলের একটি বড় অংশ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য ব্যয় করা হবে।

প্রশ্ন: এই অর্থের বণ্টন কীভাবে হবে?

এই তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোতে ৩০০ মিলিয়ন শিশুদের টিকা দিতে সহায়তা করবে। এর বাইরে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে ৫৬৭ মিলিয়ন ডলার শুধুমাত্র পরিবহন খরচে ব্যয় হবে।

প্রশ্ন: গাভি কী?

গাভি এর পূর্ণরূপ হলো (গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন)। এটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ইমিউনাইজেশনে অর্থায়ন করা সংস্থা (সরকারি-বেসরকারি বিশ্ব স্বাস্থ্য অংশীদারিত্ব)।

যা মূলত দরিদ্র দেশগুলোতে টিকাদান অ্যাক্সেসকে বাড়াতে কাজ করে। এটি বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন দ্বারা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে অবস্থিত।

প্রশ্ন: কোভিড-১৯ কীভাবে বাচ্চাদের টিকাদানকে ব্যাহত করেছে?

গাভি, ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফের যৌথ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোভিড-১৯ এর কারণে গুরুত্বপূর্ণ টিকা কর্মসূচিতে বাধার কারণে এক বছরের কম বয়সী ৮০ মিলিয়ন শিশু রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রশ্ন: ভ্যাকসিনের ব্যবহার কী?

ভ্যাকসিনের সাহায্যে কয়েক মিলিয়ন মৃত্যু, দুর্বলতা থেকে প্রতিবন্ধীত্ব ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। উদাহরণস্বরূপ, টিকা দেওয়ার জন্য শিশুদের পোলিও নির্মূলের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব।

বিগত কয়েক বছরে, নতুন ভ্যাকসিনগুলোর মধ্যে ইবোলা ও ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন বিকাশ লাভ করেছে। এতে গত ২০ বছরে, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পর আফ্রিকা ও এশিয়া জুড়ে শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

প্রশ্ন: ভ্যাকসিনের প্রধান সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ কী?

ভ্যাকসিনের বিকাশ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। একটি নতুন ভ্যাকসিন তৈরি করতে গড়ে প্রায় ১৬ বছর গবেষণা ও পরীক্ষা করতে সময় লাগে।

তাদের কার্যকারিতা এবং সুরক্ষা প্রমাণ করার জন্য ধাপে ধাপে কঠোর পরীক্ষার পরে, ভ্যাকসিনগুলো অসংখ্য রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত করেছে। তবে ভ্যাকসিন ব্যয়বহুল হতে পারে যা দরিদ্রদেশগুলোর প্রাপ্তিতে কঠিন করে তোলে।

ভ্যাকসিনগুলো কেবল তখনই কার্যকর সম্ভাবনা উপলব্ধি করে যখন তারা সবচেয়ে দরিদ্র ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে সুরক্ষার জন্য প্রদান করা হয়।

প্রশ্ন: তহবিলের প্রতিশ্রুতি বলতে কী বোঝায়?

তহবিলের প্রতিশ্রুতি এর অর্থ হলো গাভি নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ করতে সক্ষমতা অর্জন যা মূলত কোভিড-১৯ মহামারীটির প্রভাব হ্রাস করতে পারে। এই তহবিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।

প্রশ্ন: গাভিতে বৃহত্তম দাতা দেশ কোনটি?

যুক্তরাজ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের বৃহত্তম দাতা হিসেবে আছে। আগামী পাঁচ বছরে প্রতি বছর ৩৩০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যান্য শীর্ষ দাতাদের মধ্যে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, নরওয়ে, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আটটি দেশ গ্যাভির তহবিলে প্রথমবারের মতো অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে: ভুটান, বুর্কিনা ফাসো, ক্যামেরুন, ফিনল্যান্ড, গ্রীস, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, উগান্ডা।

প্রশ্ন: গাভি-সমর্থিত দেশগুলো কতটা অবদান রাখবে?

গাভি সংক্রামক রোগ থেকে নিম্ন-আয়ের দেশে কয়েক লাখ শিশুদের টিকা দেওয়ার সমর্থন করে। নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও ভ্যাকসিন বিতরণকে শক্তিশালী করে করোনাভাইরাস মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করতেও ব্যবহৃত হবে।

প্রশ্ন: গাভি-সমর্থিত দেশগুলো কতটা অবদান রাখবে?

গাভি সংক্রামক রোগ থেকে নিম্ন-আয়ের দেশে কয়েক লাখ শিশুদের টিকা দেওয়ার সমর্থন করে। নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও ভ্যাকসিন বিতরণকে শক্তিশালী করে করোনাভাইরাস মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করতেও ব্যবহৃত হবে।

গভি সমর্থিত দেশগুলোর ভ্যাকসিন কেনার ব্যয়ের জন্য ৩ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করা হয়েছে। ২০১৬-২০২০ সময়কালের জন্য দ্বিগুণেরও বেশি এই অর্থায়ন ভ্যাকসিন প্রার্থী দেশগুলোতে মোট অনুমান ব্যয়ের ৪০ শতাংশেরও বেশি। তারা একই সময়ের মধ্যে টিকা পরিষেবা সরবরাহ ব্যয়ে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন: গাভি কি ভ্যাকসিনের দাম কমাতে সহায়তা করতে পারবে?

হ্যাঁ। জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিনকে আরও সাশ্রয়ী করে তোলার জন্য গাভির প্রচেষ্টায় ‘পেন্টাভ্যালেন্ট’ (ফাইভ ইন ওয়ান ভ্যাকসিন নামে পরিচিত)। শিশুদের নিউমোকোকাল এবং রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনে ২০১৫ সালে ২১ শতাংশ দাম হ্রাস দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যা আরও হ্রাস পেয়ে ২০.১ ডলার থেকে ১৫.৯০ ডলার হয়েছে।

প্রশ্ন: কীভাবে নিম্ন-মধ্যের দেশগুলোতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অ্যাক্সেস থাকবে?

সম্মেলনে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে কোভাক্স এএমসি এর উদ্যোগে করোনার ভ্যাকসিনের অ্যাক্সেস সরবরাহের জন্য অগ্রিম বাজার প্রতিশ্রুতি প্রবর্তন ও একটি নতুন অর্থায়ন করা হয়েছে।

প্রশ্ন: কোভাক্স এএমসি উদ্যোগের তাৎপর্য কী?

এই পদক্ষেপটি ভবিষ্যতের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সঠিক বণ্টন ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার উপায় হিসেবে দেখা হয়। এএমসির ১২ দাতাদের কাছ থেকে ৫৬৭ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছিল।


শর্টলিংকঃ