কুরিয়ার ও মোবাইল ব্যাংকিং: অনুসন্ধান চালাতে পারবে দুদক ও বিএফআইইউ


কুরিয়ার সার্ভিস-মোবাইলে অর্থ লেনদেনের অনুসন্ধান চালাতে পারবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের আড়ালে ঘুষ আদানপ্রদান, মানি লন্ডারিং, চাঁদাবাজি ও মাদকের লেনদেন হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাদের।

দুদক ও বিএফআইইউ এখন কুরিয়ার ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস গ্রাহকদের লেনদেনের তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করতে পারবে। এছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অনুমোদিত মাদক ও অস্ত্র শনাক্তকরণ যন্ত্রের বাধ্যতামূলক ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে ‘মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঘুষ আদানপ্রদান নিয়ন্ত্রণ ও মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি নিরসন’ নিয়ে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ব্যাংক) ফজলুল হক বলেন, কুরিয়ার ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান লেনদেন করলে তা অবৈধ হবে।

সূত্র জানায়, কুরিয়ার ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের কার্যক্রম নিয়ে দুদক সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর, ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র, ফরম পূরণ, পাসপোর্ট আকারের ছবি ও বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ ও স্বাক্ষর নেয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া এজেন্টের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রেরণ ও গ্রহণকারীর তথ্য সংরক্ষণ হচ্ছে না। লেনদেনের ইনভয়েস ও রিসিপট না দেয়া, এমনকি প্রেরক ও প্রাপককে কোনো রসিদও দেয়া হয় না। মোবাইল ফোনের সিম বিক্রির সময়ও ব্যক্তির ছবি, আঙুলের ছাপ ও ঠিকানা সঠিকভাবে নেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, কিছু কুরিয়ার সার্ভিস অবৈধভাবে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানের ডাক ও দ্রব্যাদি আদানপ্রদানের মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর করছে। এতে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এই সার্ভিসের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রেরণ ও গ্রহণকারীর কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এতে জনগণ উপকৃত হলেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে ঘুষ আদানপ্রদান, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, মাদক ব্যবসা ও মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট অর্থের লেনদেনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত ছাড়াও অর্থ লেনদেনে ঝুঁকিও সৃষ্টি হচ্ছে। দুদকের এই চিঠির পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে কুরিয়ার ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আসাদুল ইসলাম বলেছেন, দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- গ্রাহকদের তথ্যভাণ্ডারে দুদক ও বিএফআইইউর প্রবেশ, কুরিয়ার সার্ভিসে মাদক ও অস্ত্র শনাক্তকরণ যন্ত্রের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, কুরিয়ার ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কর্তৃপক্ষের গ্রাহকের এনআইডি যাচাইয়ে বিটিআরসির উদ্যোগ গ্রহণ, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ‘নগদ’ কার্যক্রমে যাতে মানি লন্ডারিং বা অবৈধ লেনদেন না হয়, সে বিষয়ে ডাক বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পদক্ষেপ গ্রহণ।

বৈঠকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে লেনদেনে গ্রাহকের তথ্য (কেওয়াইসি) সংক্রান্ত নিয়মাবলি যথাযথ পরিপালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজেন্টের মাধ্যমে লেনদেনের সময় ডিজিটাল রসিদ দেয়া বাধ্যতামূলক করা ছাড়াও লেনদেনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিু সীমা পুনর্র্নিধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর আগেও কুরিয়ার সার্ভিসে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন, অবৈধ পণ্য বহনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়নসহ অবৈধ লেনদেন সংঘটিত হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত এসএ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সুন্দরবন কুরিয়া সার্ভিসের চেয়ারম্যান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব নিয়ম-নীতি মেনেই তা করা হচ্ছে। বৈঠকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস রকেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তারা কেওয়াইসি (নো ইয়োর কাস্টমার) সংরক্ষণ সাপেক্ষে ব্যবসা করছেন। প্রতিদিন এক ব্যক্তি কতবার মোবাইলে টাকা পাঠাচ্ছে এবং গ্রহণ করছে, তা-ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।


শর্টলিংকঃ