কেরানীগঞ্জে খামারে প্রস্তুত ৬ সহস্রাধিক গরু


কেরানীগঞ্জ উপজেলায় গরুর খামারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে খামারের সংখ্যা হয়েছে প্রায় তিনগুণ। ২০১৮ সালে যেখানে খামার ছিল ২২১টি, সেখানে ২০১৯ সালে নিবন্ধিত গরুর খামার হয়েছে ৫৮০টি। এছাড়া কয়েক হাজার পরিবার রয়েছে যারা পারিবারিকভাবে গরু লালন পালন করেন।

বাণিজ্যিকভাবে স্থাপিত খামার ও পারিবারিকভাবে পশুপালন- দুই শ্রেণীর খামারিদের মূল লক্ষ্য থাকে কোরবানির ঈদ। আর এবারের ঈদকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জে প্রায় ছয় সহস্রাধিক গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা ওষুধ ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এসব গরু পালন করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে নিয়মিত মনিটরিং এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করায় খামারিরাও এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। ফলে নিরোগ ও পুষ্টিকর মাংসের জন্য এখানকার গরুর চাহিদা বাড়ছে।
রুহিতপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর এলাকার ভাই ভাই এগ্রো ফার্মের মালিক ওহিদুর রহমান। বিদেশ ফেরত ওহিদুর এ বছর গড়ে তুলেছেন খামারটি। প্রাথমিক পর্যায়ে ২০টি গরু নিয়ে তিনি খামার চালু করেছেন।

ঈদকে টার্গেট করে প্রথম থেকে তিনি ২০টি গরুকে দেশীয় পদ্ধতিতে পালন করে আসছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, খড়কুটা, গমের ভুসি, ধানের কুড়া, ভুট্টা, মুগ ও লাও দিয়ে পাকানো জাউ এবং বিভিন্ন ধরনের ঘাস, কলমিলতা খাবার হিসেবে গরুকে দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে আমি খামারটি গড়ে তুলেছি। গরুর কোনো সমস্যা হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে পশু ডাক্তার এসে যথাযথ চিকিৎসা দেন। প্রশিক্ষণ নেয়ায় আমরাও ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করতে পারছি।
পোড়াহাটি এলাকার ফিট অ্যান্ড ফ্রেস এগ্রো খামারের মালিক আকবর আলম উৎপল জানান, ২০১৪ সালে তিনি একটি গরু দিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে ৪০০ গরু আছে।

এর মধ্যে ১৫০ গরু কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিক্রি করা হবে। এছাড়াও তার খামারে বিক্রির জন্য শতাধিক উন্নতমানের ছাগল রয়েছে। বেশিরভাগ ছাগলের ওজন ৭০ থেকে ৮০ কেজি। বিক্রি করছি ৭০ হাজার থেকে একলাখ টাকা পর্যন্ত।

কেরানীগঞ্জের একটি খামারে গরু কিনতে এসেছেন রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা খোকন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানের খামারের গরুগুলো দেশীয় পদ্ধতিতে পালন করে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। যার কারণে মাংসে কোনো ক্ষতিকর উপাদান থাকে না। এছাড়া খামার থেকে সরাসরি কোরবানির গরু কেনাটা নিরাপদ। প্রতিবছর তিনি কেরানীগঞ্জের কোনো না কোনো খামার থেকে কোরবানির গরু কিনে থাকেন।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জহির উদ্দিন জানান, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৮০টি খামারে ৬৪৫০টি গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। এসব পশুর প্রতিষেধক টিকা প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছ। নিরাপদ গরুর মাংস উৎপাদনের জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ দেয়ায় সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, স্যাম্পল হিসেবে ২৫টি খামারের ৭৫টি গরুর ইউরিন নিয়ে ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে।

পরীক্ষায় কোনো গরুতেই ক্ষতিকর ফিড বা স্টরয়েড পাওয়া যায়নি। কাজেই আমরা এটা বলতে পারি যে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন খামারে পালিত গবাদিপশুগুলো ভালো মানের এবং নিরোগ।


শর্টলিংকঃ