কোয়াডের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি পুনঃসমর্থনের সম্ভাবনা বাংলাদেশের


ইউএনভি ডেস্ক:

গত মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এক নজিরবিহীন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন চতুর্পক্ষীয় সুরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশ যুক্ত হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। চীনের সাথে তার সম্পর্ক ‘যথেষ্ট খারাপ হবে।।’

জিমিংয়ের এই বক্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করেছে এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকারগণ কোয়াড (একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার এক উদ্যোগ)-এ বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছেন। যদিও কোয়াড-এ অংশগ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশের এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা নেই, তথাপি মন্তব্যটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর একটি আঘাত, যে দেশটির নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের চূড়ান্ত অধিকার রয়েছে।

সম্প্রতি, কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। এই সন্ধিক্ষণে, কোয়াড-এর অংশীদার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। মহামারি সৃষ্ট মন্দার পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি নির্ভর করছে ব্যাপকহারে টিকাদান কর্মসূচির উপর । বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিলম্ব চায় না, এবং টিকাদান কর্মসূচিকে বেগবান করাই হচ্ছে একমাত্র বিকল্প। যখন কোভিড-১৯-এর সাথে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন, তখন কোয়াড সদস্যরা আশ্বস্ত করেছেন যে তারা নিরাপদ ও কার্যকর টিকা বিতরণের জন্য একটি টিকা বিশেষজ্ঞ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রায়োগিক, বিতরণ, প্রস্তুতকরণ এবং উন্নয়ন দক্ষতাসমূহ সরবরাহ করবেন।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক প্রবণতা রয়েছে এবং ধীরে ধীরে তার পুনরুদ্ধার ঘটবে। ২০২১-এর প্রথমার্ধে, এর গতিশীলতা প্রাক-মহামারি পর্যায়ে ফিরে আসে, কারখানাগুলি ‍খুলে দেয়া হয় এবং পুনরায় রপ্তানি শুরু হয়। ফলে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এই বছর ৩.৬ শতাংশে পৌঁছুতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই টিকাদান কর্মসূচি সফল হলে একটি শক্তিশালী পরিষেবা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

২০০৪ সালে সুনামি বিপর্যয়ের পরে কোয়াড আত্মপ্রকাশ করেছিল। চলমান কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে এটি একটি নতুন প্রেরণা পেয়েছে এবং এর পুনরাবির্ভাব মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিরাপত্তাজনিত ভবিষ্যৎ হুমকিসমুহ মোকাবেলায় একটি অভিন্ন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

উপরন্তু, এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির সাথে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। কোয়াড শুল্কমুক্ত রপ্তানির জন্য জিএসপি ব্যবস্থা ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে উন্নত বাজার প্রবেশ সুবিধা পেতে ও অধিক বিনিয়োগকারী আকর্ষণ করতে সহায়তা করতে পারে। কোয়াড-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জাপান বাংলাদেশের সপ্তম বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। জাপানের ভারী যন্ত্রপাতি শিল্পে বাংলাদেশ বিপুল বিনিয়োগ সুবিধা অর্জন করতে পারে। পাশাপাশি ভারত বাংলাদেশের একটি পুরাতন বিশ্বস্ত বন্ধু ও সহযোগী। ২০১৮-১৯ বছরে তাদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। কোয়াড-এ যোগদান ভারতের বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি আরও জোরদার করবে। ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের দ্বিমুখি পণ্য বাণিজ্যসহ বাংলাদেশের সাথে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিমুখি পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের পরিমাণ ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ যদি কোয়াড-এ যোগ দেয়, অস্ট্রেলিয়া তার বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বাস করে যে সমুদ্রবন্দরসহ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান আঞ্চলিক সংহতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।

অবশ্যই, বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত তার নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে আসতে পারে। তারপরও, যথাযথ মধ্যস্থতার সাথে এটি নিজেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলির অন্যতম একটি হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারে এবং তা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে কোয়াড।


শর্টলিংকঃ