চালের বাজার হঠাৎ অস্থির


ইউএনভি ডেস্ক:

রাজধানীর বাজারে হঠাৎ চালের দাম বেড়েছে। অনেকের অযৌক্তিক বাড়তি কেনাকাটায় অতি মুনাফা তুলছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সব ধরনের সেদ্ধ চালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। গত দু’দিনে এ দাম বাড়ান তারা। হঠাৎ এভাবে দাম বাড়িয়ে দেওয়া কিংবা ভোক্তাদের বাড়তি কেনার প্রবণতা কোনোটিই যৌক্তিক নয় বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।

চালের বাজার হঠাৎ অস্থির

আজ বুধবার সকাল ১১টায় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব পণ্যের মজুদ, সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।চাল বিক্রেতারা দাবি করেছেন, হঠাৎ করে ক্রেতারা অতিরিক্ত চাল কিনে মজুদ করছেন। এর ফলে পাইকারি বাজারে বাড়তি চাহিদায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে এটা স্থায়ী হবে না। বাজারে চাহিদা কমে গেলে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করেন তারা।

বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন সমকালকে বলেন, দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে, ভোক্তাদের পণ্য কিনে মজুদ করতে হবে। তা ছাড়া রমজান পর্যন্ত চাহিদা মেটাতে সব ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। এর পরও কোনো ব্যবসায়ী বা ক্রেতা বাজারে সংকট তৈরির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সবকিছুর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। বাজার দাম স্বাভাবিক রাখতে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর ১নং, কারওয়ান বাজার, টাউন হল ও নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরায় কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে নাহিদের হরিণ ব্র্যান্ডের ভালো মানের নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই হারে বেড়ে মানভেদে অন্যান্য নাজিরশাইল চাল ৫৫ থেকে ৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর মিনিকেটের দাম কেজিতে সাত টাকা বেড়ে মানভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন আগেও মিনিকেটের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা ছিল। কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে মোটা (স্বর্ণা ও গুটি) চাল ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। প্রায় একই হারে বেড়ে বিআর-২৮, পাইজাম ও লতা (মাঝারি) চাল মানভেদে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বাজারেও ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম। গতকাল মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও বাদামতলী চালের আড়তে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হয়। আগের সপ্তাহে ৫০ থেকে ৭০ টাকা ছিল। আর ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি মিনিকেট বেড়ে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। একই হারে বেড়ে বিআর-২৮সহ মাঝারি মানের চাল ৩৭ থেকে ৪০ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা ও গুটি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের গত সোমবারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেশ বেড়েছে। সরু চালের দাম ৯ শতাংশ, মাঝারি চাল ৫ শতাংশ ও মোটা চাল ৫ শতাংশ বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের গত সোমবারের তথ্য অনুযায়ী, সরু চালের দাম তিন টাকা, মাঝারি চালের দাম পাঁচ টাকা ও মোটা চালের দাম দুই টাকা বেড়েছে কেজিতে। এদিকে সোমবারের তুলনায় রাজধানীর বাজারে গতকাল মঙ্গলবার চালের দাম আরও বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, মৌসুমের শেষ সময়ে মিলগুলোতে মজুদ থাকা চাল এখন সবাই বিক্রি শেষ করবে। এ কারণে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। আগামী এপ্রিল মাসের শেষভাগে নতুন চাল বাজারে ছাড়বেন। এ অবস্থায় দাম বাড়ালে বাজার মনিটরিং জোরদার করা উচিত। তিনি বলেন, কোনো পর্যায়ে দাম বাড়ালে শাস্তি দেওয়া দরকার।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বলেন, ধানের দাম বাড়ছে এ কারণে চালের দাম সামান্য বাড়তি। এতে বাজারে তেমন প্রভাব পড়ার কথা নয়।কারওয়ান বাজারে হাজি চালের আড়তে ব্যবসায়ী মইনুদ্দিন মানিক বলেন, তিন দিন ধরে খুচরা ক্রেতারা তুলনামূলক বেশি করে চাল কিনছেন। এই বাড়তি চাল কেনার যৌক্তিকতা নেই। বাড়তি চাহিদা বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।শুধু চাল নয়, বাজারে ডাল, আটা-ময়দা ও আলুর দামও বেড়েছে।


শর্টলিংকঃ