‘ছেলেধরা’ গুজবে কান না দিতে রাজশাহীতে মাইকিংয়ের নির্দেশনা


নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী অঞ্চলে ‘ছেলেধরা গুজব’ ছড়িয়ে পড়ছে। ছেলেধরা সন্দেহে গেল দু্ই দিনে অন্তত ১০জনকে গণপিটুনী দিয়েছে স্থানীয়রা। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এধরনের গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ, এ ধরনের গুজবের কোনো ভিত্তি  নেই।  তবে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় মাইকিংয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।  রাজশাহীর এসপি মো. শহিদুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, রোববার সকালে নওগাঁর মান্দায় ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে ৬ যুবককে পিটিয়ে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।  তবে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত  জানা যায় নি।

এর আগে শনিবার বিকেলে রাজশাহীর তানোরে ছেলেধরা সন্দেহে দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়ে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছে গ্রামবাসী। এতে তারা আহত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। কমলা ইউনিয়নের বহড়া ও কামারগাঁ ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে এ পৃথক দুইটি ঘটনা ঘটে। দুই যুবকের মধ্যে একজনের নাম মনোয়ারুল বলে জানা গেলেও আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায় নি।

তানোর থানার ওসি খাইরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কলমা ইউনিয়নের বহড়া থেকে ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবককে (১৫) গণপিটুনি দিয়ে র‌্যাব-৫ এর হাতে তুলে দিয়েছে গ্রামবাসী। শনিবার বিকালে র‌্যাবের একটি দল যুবকটিকে ঘটনাস্থল উদ্ধার করে তানোর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

তানোরে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনীর শিকার যুবক

অপরদিকে, দুপুরে একই সন্দেহ উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কচুয়া গ্রাম থেকে মনোয়ারুল নামে আরেক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে গ্রামবাসী। তবে পরে জানা যায় সে ছিছকে চোর। তাকে চুরির মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

শনিবার সকালে  ছেলেধরা সন্দেহে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এক প্রতিবন্ধী নারীকে পুলিশে সোপর্দ করেছে মহল্লাবাসী।  গোদাগাড়ী পৌরসভার শ্রীমন্তপুর মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ অবশ্য তাকে ছেড়ে দিয়েছে।

গোদাগাড়ী ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে আটক করে গ্রামবাসী

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানুষের মধ্যে ‘কল্লা কাটা’ গুজবের ফলে ওই নারীকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশের কাছে দেয়া হয়। কিন্তু ওই নারী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। তার ছেলে সোনালী ব্যাংকে কর্মরত। ছেলের কাছেই তাকে দেয়া হয়েছে।

এদিকে, পাবনার চাটমোহরে উপজেলার বনগ্রাম বাজার এলাকায় শনিবার দুপুরে ছেলে ধরা সন্দেহে রাসেল রানা (৩২) নামে এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। আটক যুবক রাসেল ঈশ্বরদী উপজেলার আমবাগান এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে।

চাটেমোহরে আটক রাসেল রানা 

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের বনগ্রাম দীঘিপাড়া গ্রামের নায়েব আলীর ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৪) বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে বসে খেলছিল। এ সময় রাসেল রানা নামের ওই যুবক শিশুটিকে ডেকে চুইংগাম দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে রাসেলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে খবর দেয়া হয়।

তবে  ‘ছেলেধরা’ গুজবে কান না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ্।  তিনি বলেছেন,  ‘ছেলেধরা’র বিষয়টি একেবারেই গুজব। কোনো মহল হয়তো অসৎ উদ্দেশ্যে এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।  আতঙ্কে কোনো শিশুর যেন স্কুলে যাওয়া বন্ধ না হয়। তবে কোনো বিষয়ে কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে তা দ্রুত পুলিশকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।


শর্টলিংকঃ