জেলা কর্মকর্তাদের জন্য এসি কেনার প্রস্তাব


ইউএনভি ডেস্ক: 

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে বিলাসী ব্যয়ে লাগাম টানতে তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। কিন্তু এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাব থামছেই না। ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের জন্য ১১টি এসি কেনার প্রস্তাব করেছে মৎস্য অধিদফতর।


সেই সঙ্গে প্রকল্পটির আওতায় জেলা মৎস্য দফতর মেরামত, সীমানা প্রাচীর মেরামতের কাজও যুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কেনা হবে টেলিভিশন এবং স্টুডিও ক্যামেরাও। তবে এসব বিষয়ে আপত্তি তোলেনি পরিকল্পনা কমিশন। ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

ফলে করোনার প্রভাব পড়েনি এটির ব্যয় বিভাজনে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় পেশ করার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে এ ধরনের ব্যয় পরিহার করতে আমি ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের নির্দেশা দিয়েছি। এগুলো দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি। দূর হতে একটু সময়তো লাগবেই। আমি এ বিষয়ে কমিশনের সংশ্লিষ্ট সদস্যের (সচিব) সঙ্গে কথা বলব।

সূত্র জানায়, ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০২ কোটি টাকা। অনুমোদন পেলে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদফতর। প্রকল্পের আওতায় ৩৯২টি দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ প্রদর্শনী ও ১৫টি শামুকের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ১০০টি খাঁচায় মাছ চাষ প্রদর্শনী, ১১০টি ধান ক্ষেতে মাছ চাষ প্রদর্শনী ও ৩৯২টি পোনা মাছ চাষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গে মৎস্য সেক্টর সংশ্লিষ্ট এলাকার ১ লাখ ৮ হাজার ৮৪৭ সুফলভোগীর দক্ষতা উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় বিভাজন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৈদেশিক সরঞ্জামাদি অংশে প্রকল্প পরিচালক এবং জেলা মৎস্য অফিসের জন্য এয়ারকন্ডিশনার (এসি) কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ লাখ টাকা।

এসব এসি গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, ফিরোজপুর, বরগুনা এবং নড়াইল জেলা মৎস্য অফিসে স্থাপন করার কথা। এছাড়া দুটি ডিএসএলআর স্টুডিও ক্যামেরা কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। জেলা মৎস্য দফতরের সীমানা প্রাচীর মেরামত বাবদ (৪ বছর) ৫৫ লাখ টাকা, জেলা মৎস্য দফতর মেরামত (৪ বছর) ২৫ লাখ টাকা এবং একটি টেলিভিশন কেনার জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিলাসী ব্যয় থামাতেই হবে। দেশীয় মৎস্য ও শামুক চাষ উন্নয়ন প্রকল্পে এসি কেনার প্রস্তাব হাস্যকর। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর মতো বাস্তবতায় এটা একেবারেই ঠিক নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যে কোনো ধরনের বিলাসী ব্যয় অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। সেটি যত কম টাকাই হোক না কেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ ও মধ্য পশ্চিম অঞ্চল খাল, বিল, প্লাবনভূমি ও নদী সমৃদ্ধ জেলা। এসব জেলার অধিকাংশ জলাশয়ের নিম্নাঞ্চলে সারা বছরই পানি থাকে। এসব বিল ও প্লাবনভূমি শামুকের বিচরণ ক্ষেত্র।

এছাড়া দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ থাকায় এক সময় দেশি কৈ, মাগুর, শিং, শোল, টাকি, রয়না, সরপুটি, টেংরা ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ভরপুর ছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, খাল-বিল-নদী-নালা ভরাট, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অধিক হারে মাছ ও শামুক আহরণ, কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পানি দূষণসহ বিভিন্ন কারণে মাছ ও শামুকের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এজন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।


শর্টলিংকঃ