জৌলুস হারাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চার নদী


নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ জেলা দিয়ে পদ্মা, মহানন্দা, পাগলা ও পূনর্ভবা নদী বয়ে গেছে। জেলার পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার, মহানন্দার দৈর্ঘ্য ৯৫, পাগলার দৈর্ঘ্য ৪১ ও পূনর্ভবা নদীর দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার।

পাগলা নদীর চিত্র।

হিমালয়ের পাদদেশে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পলি উজান থেকে আসে। অপরদিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পাংখা পয়েন্ট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ভারত ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণ ও অপর তিনটি নদীতে বাঁধ দেয়ার কারণে পানির প্রবাহ সারা বছরই কম থাকে। স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় ভরাট হয়ে এ নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়।

পদ্মা, মহানন্দা ও পাগলা নদী থেকে অবৈধভাবে নিয়মিত মাটি ও বালু তোলা হচ্ছে। মৃতপ্রায় মহানন্দা নদীর তীর দখল করেছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। পৌরসভার ড্রেনের পানি গিয়ে পড়ছে মহানন্দা নদীতে; ফলে দূষিত হচ্ছে নদী। শহরের খালঘাটে ফেলা হচ্ছে সমস্ত বর্জ্য। এতে নদীর তীরও দূষিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ ‘ক’ অনুচ্ছেদে পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়ন আইন- এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের কথা।

মহানন্দা নদীর প্রায় মাঝখানে এখন ঘাস খাচ্ছে গরু।

এছাড়াও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন-২০১৩ নামে একটি আইন সংসদে পাস হয়। ওই আইনে উল্লেখ রয়েছে- নদী দখল, প্রাণী ও পরিবেশ দূষণ, শিল্প কারখানা কর্তৃক সৃষ্ট নদী দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধারের বিধান। এছাড়াও নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌ-পরিবহনযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

সংবিধানের জলাধার সংরক্ষণ এবং নদী রক্ষা কমিশনের তৃতীয় অধ্যায়ের ১২ নম্বর ধারায় নদী অবৈধ দখলমুক্ত এবং পুনঃদখল রোধ করা, নদী তীর দূষণমুক্ত রাখা এবং বিলুপ্ত বা মৃতপ্রায় নদী খননের বিষয় সরকারকে সুপারিশ প্রদান করবে কমিশন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংবিধানের ১৮ ‘ক’ অনুচ্ছেদ এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন-২০১৩ লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

স্থানীয়রা বলছেন, পাগলা নদী খনন ও মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে তারা দেখেননি। পাগলা নদী খননের বিষয়ে তারা মনে করছেন পুরো নদী খনন না করে আংশিক করলে নদীতে আবারো পলি জমে নাব্যতা হারানোর আশংকা রয়েছে। এছাড়া মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ করলে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যহত হবে এবং রাবার ড্যামের বিপরীত দিকে পানি শূন্যতা দেখা দিবে। এতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

শুকিয়ে গেছে পাগলা নদী।

‘সেভ দ্য নেচার’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান সম্বনয়কারী রবিউল হাসান ডলার বলেন, মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ না করে নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। অবিলম্বে জেলার মিঠা পানির উৎস ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ জেলার ৪টি নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, নদী তীর দখল বন্ধ, ড্রেনের পরিবর্তে মহানন্দা নদী দূষণ বন্ধ করতে হবে।

‘পরিবেশ বিপর্যয় থেকে শুরু করে আর্থ রাজনৈতিক নানা কারণে এ নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ আজ সংকটের সম্মুখীন। বিষয়টি সবাইকে চিন্তার মধ্যে রাখতে হবে। আর এতেই নদী বাঁচবে, বাঁচবে প্রাকৃতিক পরিবেশ। তাই সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নদী রক্ষায় সবারই সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।


শর্টলিংকঃ