তবুও থামছে না সাগর পথে বিদেশযাত্রা


ইউএনভি ডেস্ক:

সাগরে ট্রলারডুবিতে মৃত্যুর মিছিল বাড়লেও থামানো যাচ্ছে না অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা। প্রশাসনের কড়া নজরদারির মাঝেও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সৈকতের কোনো না কোনো স্থান বা সাবরাংয়ের উপকূল দিয়ে রোহিঙ্গারা দালালদের হাত ধরে নৌকায় উঠছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে মালয়েশিয়া পাচারে নিত্য-নতুন পয়েন্ট আবিষ্কার করছে পাচারকারীরা।

তবুও থামছে না সাগর পথে বিদেশযাত্রা

গণমাধ্যম সূত্রগুলো বলছে, সাগর পাড়ের বিস্তীর্ণ জনপদ উখিয়া-টেকনাফ মানব পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করছে সংঘবদ্ধ পাচারকারী সিন্ডিকেট। কক্সবাজারে ১০১ জন তালিকাভুক্ত মানব পাচারকারী রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক তাদের পদচারণা। তাদের রয়েছে অসংখ্য সোর্স। এসব সোর্সের মাধ্যমে পাচারকারী সিন্ডিকেট সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের টার্গেট করে পাচার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি সেন্টমার্টিনের কাছে সাগরে ট্রলারডুবিতে নারী-শিশুসহ ১৫ জন নিহত হবার পরও বৃহস্পতিবার রাতে সাবরাং এলাকার নৌ-উপকূল থেকে মালয়েশিয়া যেতে নৌকার অপেক্ষায় থাকা ১২ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে টেকনাফ পুলিশ। এ সময় দুই দালালকেও আটক করা হয় বলে দাবি করেছেন অভিযানকারীরা।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি টেকনাফের বাহারছরা সমুদ্র উপকূল থেকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতিকালে ২২ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করা হয়। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টাকালে প্রায় ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অভিযোগ রয়েছে, শীতের সময়টা সাগর কম উত্তাল থাকে, ফলে এ সময়টাকে নৌপথে পাচারের জন্য নিরাপদ বলে ধরে নিয়ে কাজ করে পাচারকারীরা। এছাড়া অভিযানে সহযোগীরা আটক হলেও পাচারকারী চক্রের মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় মানব পাচার চেষ্টা বন্ধ হচ্ছে না। ফলে সক্রিয় দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের সব কটি ক্যাম্পভিত্তিক অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নারীরা দাবি করেছেন, অবিবাহিত নারীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলারে তোলা হয়। আবার যেসব নারীর স্বামী মালয়েশিয়ায় তারাও যে কোনোভাবে মালয়েশিয়া যেতে উন্মুখ। অনেক তরুণী ও কম বয়সি বিধবা নারীরাই মালয়েশিয়া যেতে প্রতিনিয়তই চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়া যেতে রাজি হওয়াদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা টোকেন মানি আদায় করা হয়। চুক্তি হয় মালয়েশিয়া পৌঁছে বাকি টাকা নেওয়ার। ক্যাম্পের দালালদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে রয়েছে সুযোগসন্ধানী বাংলাদেশি দালালও। রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প হতে বের করে তাদের (বাংলাদেশি দালাল) হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশি দালালরা সুযোগ বুঝে ট্রলার বা নৌকায় সাগরে অবস্থান করা জাহাজে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রবের মতে, মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই জেনেই উদ্বাস্তু এসব রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নিচ্ছে দালালরা।

এ প্রসঙ্গে কোস্ট গার্ডের সেন্টমার্টিন স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার নাঈম উল হক বলেন, সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার ঠেকাতে কোস্ট গার্ড সজাগ রয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন জানান, সাগরপথে যেসব পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচারের আশঙ্কা আছে, সেখানে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে দায়ের করা ৬২১টি মামলার বিচার বর্তমানে কক্সবাজার আদালতে চলছে। ২০১২ সালে আইনটি পাশ হওয়ার পর গত জানুয়ারি পর্যন্ত এসব মামলা হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে একটি মামলারও বিচার সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া পাচারের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের গ্রেফতার করা না গেলে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচার বন্ধ হবে না বলে মনে করেন সচেতন মহল।

আরো পড়তে পারেন:‘বাচ্চাদের মেরে ফেললাম, আমার লাশ পাবে রেললাইনে’


শর্টলিংকঃ