তানোরে লক্ষাধিক কৃষকের সুবিধা ভোগ করছেন ২১ হাজার কৃষক


সাইদ সাজু, তানোর থেকে :

রাজশাহীর তানোর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর সভায় প্রায় লক্ষাধিক কৃষক কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু সরকারী সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ২১ হাজার কৃষক। অপর দিকে কৃষি অফিসের ওয়েব সাইডে দেয়া তথ্যের সাথে কৃষি কর্মকর্তার কথার মিল নেই।

তথ্যবাতায়ন তানোর উপজেলার কৃষি অফিসের ওয়েব সাইডে দেয়া আছে ২১হাজার ১১জন কৃষকের নামের তালিকা কিন্তু কৃষি অফিসার বলছেন প্রায় ৩০হাজার কৃষকের কৃষি কার্ড করা আছে। কৃষি অফিসের তৈরি করা তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ করা গেছে, প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকের নাম ছাড়া পড়লেও শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরতদের ওই তালিকায় নাম রয়েছে। এতে করে প্রকৃত খেটে খাওয়া প্রান্তিক কৃষক সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে প্রতি বছর বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে কৃষক সমাজে চরমক্ষোভ ও অসন্তাষ বিরাজ করছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২০১৯ সালের ২৩ জুন সারাদেশে কৃষি শুমারি প্রকাশ করা হয়। বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। এতে উঠে আসে কৃষক ও কৃষি খামারের সংখ্যা ছাড়াও কৃষির প্রকার, ভূমির মালিকানা, ভূমির ব্যবহার, শস্যের ধরন, চাষ পদ্ধতি, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি ছাড়াও ছাগলের সংখ্যা, মৎস্য খামার ও কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত জনবল সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত।

কিন্তু http://dae.tanore.rajshahi.gov.bd  নামের ওয়েবসাইড ঘেঁটে দেখা গেছে, তানোর উপজেলা কৃষি বিভাগ আবারও যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা ভুলে ভরা। মূলত মাঠ পর্যায়ে কৃষকের দৌড়গড়ায় গিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি বলে জানান একাধীক কৃষক। ফলে উপজেলার প্রকৃত কৃষকের নাম কৃষি শুমারিতে উঠে আসেনি। সম্প্রতি কৃষক শুমারিতে তানোর উপজেলায় মাত্র ২১ হাজার ১১ জন কৃষকের নাম তালিকায় অর্ন্তরভুক্ত করা হয়েছে। ফলে তানোর উপজেলার প্রায় ৭৯ হাজার কৃষককে ‘কৃষি শুমারি’ থেকে বাদ ফেলা হয়েছে। এতো সংখ্যক প্রকৃত কৃষক বাদ রেখে কৃষি অফিসের মনগড়া ভুলেভরা ‘কৃষক শুমারি’ প্রস্তুত নিয়ে ক্ষোভ ও অন্তোষ বিরাজ করছে কৃষক সমাজে।

এমন অভিযোগ উপজেলার জিওল-চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আলতাব হোসেন ১৫ বিঘা জমি রয়েছে এবং তিনি প্রকৃত কৃষক হওয়া সর্তেও তালিকায় তার নাম নাই। ধানতৈড় গ্রামের আশরাফুল আলম ১০ বিঘা জমিতে নিয়মিতই ধান ও আলু চাষ করেন, কিন্তু কৃষি তালিকায় তারও নাম নাই। তারা জানান, কৃষি কার্ডের জন্য অফিসে ঘুরেও কার্ড পাওয়া যায়নি। ফলে কৃষি শুমারিতে তাদের নাম আসেনি বা আওতাভুক্ত হননি। একারণে এতো বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা। কৃষি কার্ডের নামের তালিকায় নাম বাদ পড়া কৃষকরা বলছেন জমি নেই চাষাবাদও কলেন না এমন অনেকেরই নাম কৃষি কার্ডের তালিকায় রয়েছে। কৃষি কার্ড নিয়ে তারা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।

এনিয়ে তানোর উপজেলার আদর্শ কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, বেসরকারি এক সংস্থার তথ্যমতে তানোর উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি কৃষির সাথে জড়িত। কিন্তু কৃষি বিভাগ থেকে মাত্র ২১ হাজার ১১জনকে কৃষি কার্ডের তালিকায় তালিকা নাম তুলেছেন। ওই তালিকা নিয়ে প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই করে নতুন ভাবে স্বচ্ছ ও মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকদের নাম তালিকায় অর্ন্তরভুক্ত করা প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ভুলেভরা মনগড়া কৃষকের নাম ব্যবহার করে তাদের আস্থাভাজনদের দিয়ে প্রতি মৌসুমে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ করছেন। ফলে প্রকৃত কৃষক সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের আগে প্রায় ৩০হাজার কৃষকের নামে কৃষি কার্ড করা হয়েছে, বর্তমানে সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী কৃষি কার্ড তৈরি বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, যদি কোন কৃষক কৃষি কার্ড করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে আবেদন করলে বিবেচনা করে দেখা হবে। ওয়েব সাইডে মাত্র ২১হাজার ১১জন কৃষকের নাম তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে আপনার তথ্যের সাথে ওয়েবসাইডের তথ্যের মিল নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে যান।

এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ও সরকারী নিয়মঅনুযায় আগামীতে কৃষক শুমারি শুরু হলে সকল কৃষককে অর্ন্তভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।


শর্টলিংকঃ