দুই বছর অফিস না করেও বেতন তুলেন বন্দর কর্মকর্তা


বেনাপোল স্থলবন্দরের ৩৪ নম্বর শেড (গুদাম) ইনচার্জ মোহাম্মদ আশারাফুল ইসলাম প্রায় দুই বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তবে তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেনাপোল স্থলবন্দরের ৩৪ নম্বর শেডে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে তাকে পাওয়া জায়নি।

বন্দর সংশ্লিষ্ট লেবাররা জানান, দীর্ঘদিন যাবত ৩৪ নম্বর শেড ইনচার্জ মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম নিজ কর্মস্থলে আসেন না। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে একাধিকবার তার কর্মস্থলে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থাকতেন। এতে বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি কাজ মারাত্মক ব্যাহত হওয়ায় তাকে কর্তৃপক্ষ কয়েকবার সতর্ক করে।

তার অনুপস্থিতের কারণে তাকে কয়েকবার কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়। তিনি এখানে কাজ না করেই ঢাকা থেকে বেতন তুলছেন বলে জানা গেছে।

বেনাপোল বন্দরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চাকরিতে যোগদানের পর থেকে মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে একাধিকবার কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে ৩৪ নম্বর শেডের মালামাল লোড-আনলোডের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

তাতেও সাড়া দেননি আশরাফুল ইসলাম। জবাব দেননি কারণ দর্শানো নোটিশের। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩৪ নম্বর শেডের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন আবু মুছা মোহাম্মদ তারেক নামে এক কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে আশরাফুল ও তারেকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তিনদিন পর বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয় তারেক।

পরে ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর রাতে বন্দরের ব্যারাকে আশরাফুল ও তারেকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ওই ঘটনায় তারেকের নামে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর, কাগজপত্র, তিন লাখ টাকা ও ল্যাপটপ ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে একই বছর ১৭ অক্টোবর বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার দাবি করে একটি পত্র দেয় আশরাফুল। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ সহকারী পরিচালক মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। আশরাফুলের আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে রিপোর্ট দেয় তদন্ত কমিটি।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, তাদের দুইজনের মধ্যে কথা কাটকাটি হয়েছে। কোনো লাঠি দিয়ে আঘাত বা টাকা-মালামাল ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর আশরাফুল তিন দিনের ছুটি নিয়ে আর কর্মস্থলে ফিরে আসেনি।

জানা গেছে, আশরাফুল বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে বেতন ভাতা তুলছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ আশরাফুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, এ ধরনের সংবাদের ভিত্তিতে আশরাফুল চলতি বছরের ২২ অক্টোবর তারেকসহ বন্দরের ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে যশোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর রাতে আসামিদের দ্বারা মারধরের শিকার হয়ে প্রায় ২ বছর তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। অথচ বন্দরের হাজিরা রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে আশরাফুল ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত অফিস করেছেন।

বেনাপোল স্থলবন্দরের সিবিএ’র সহ-সভাপতি মনির হোসেন মজুমদার জানান, আশরাফুল বন্দরের দায়িত্ব পালন না করে ব্যারাকে দরজা বন্ধ করে অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে গোপন বৈঠক করতেন। বন্দরের কর্মকর্তাদের ব্যঙ্গ করে কবিতা লিখে বই ছাপিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে দিতেন। নিজেকে রক্ষা করতে বন্দরের কর্মকর্তাদের নামে মিথ্যা মামলা করেছেন।

এ বিষয় আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমিন দীর্ঘদিন আশরাফুল ইসলামের অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, আশরাফুল যশোর আদালতে ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন শুনেছি। বিস্তারিত জানি না।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল জানান, প্রায় দুই বছর অনুপস্থিত থাকা আশরাফুল সংযুক্তির মাধ্যমে বেনাপোল স্থলবন্দরে কর্মরত থাকায় বেতন-ভাতা প্রধান কার্যালয় ঢাকা থেকে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ছুটি নিয়ে কর্মস্থলে আর ফিরে না আসায় আশরাফুলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রবিধানমালা-২০০৪ এর ৪০ এর (ক) ও (খ) মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশনামা পাঠান বন্দরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আমিনুল ইসলাম। তবে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।


শর্টলিংকঃ