দেশে হাজার খানেক হবিবুর থাকলে আরো উন্নতি সম্ভব: মেয়র লিটন


নিজস্ব প্রতিবেদক :

“আমার মনে হয় দেশে হাজার খানেক প্রফেসর মহা. হাবিবুর রহমানের মতো অধ্যক্ষ থাকলে দেশটা আরো উপরে উঠে যেত। দেশে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ হাজার হাজার আছে কিন্তু এতো গুণের সমাহার, নান্দনিক, শৈল্পিক দৃষ্ঠিভঙ্গি অন্য কারো ভেতরে নেই।” রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানের অবসরোত্তর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আরো বলেন, “রাজশাহী কৃষি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। রাজশাহীকে এক বিশাল শিক্ষাযজ্ঞের নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।”

বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী কলেজ শিক্ষক পরিষদের দিনব্যাপি নানা আয়োজনে এ বিদায়ী সংবর্ধণা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষের ভূয়ষী প্রশংসা করে বলেন, এ মানুষটির কারণে এক সময়ের অবিভক্ত বাংলার উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ পরপর পাঁচবার বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষাসহ সবদিক দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

তার সুযোগ্য নেতৃত্বে কারণে ঝকঝকে তকতকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মাঝে হানাহানি কিংবা বিদ্বেষ নেই। এ মানুষটির কারণে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে ভাই-বোনের পবিত্র সর্ম্পক বিদ্যমান। সেই মানুষটি যখন তার শেষ কর্মদিবস পালন করে এবং তাকে নিয়ে তার সহকর্মীরা অন্তর থেকে কিছু কথা বলে; সেই মানুষটির সর্ম্পকে যতই বলা যাক তা কম হবে।

সিটি মেয়র আরো বলেন, আমি তাকে নানাভাবে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেছি। বাংলাদেশে যদি হাজার খানেক হাবিবুর রহমান থাকতো তবে দেশ আরো অনেক এগিয়ে যেতো। কারণ সারা বাংলাদেশে তো হাজার হাজার প্রফেসর আছে, এরমধ্যে ভালোও অনেক আছে। তবে সবদিক মিলিয়ে এতোগুনের সমাহার, নান্দনিক ও শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি কয়জনের আছে। তিনি একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের কাছে পিতৃতুল্য অন্যদিকে অভিভাবক হিসেবে প্রয়োজনীয় কড়া ব্যবস্থা নিতেও দ্বিধাবোধ করেন নি।


মেয়র বলেন, আমরা রাজশাহী কলেজে আরো কিছু বছর তাকে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা বাধা পেয়েছি। কেননা এমনটা হলে এটা কেই সারা বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করানো হবে। তবে আমি নিশ্চিত এমন একটা কর্মবীর মানুষকে বসিয়ে রাখা যাবে না। সুতরাং তাকে সম্মান জানিয়ে তার মেধাকে দেশের জন্য কাজে লাগাতে হবে। কেননা তিনি দেশকে ভালোবাসেন তিনি দেশকে কিছু দিতে পারবেন।

এ সময় অধ্যক্ষকে হতাশা না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, আমার দল যতদিন ক্ষমতায় আছেন ততদিন পর্যন্ত আপনাকে যথোপযুক্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যেও শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন করার লক্ষ্য আমাদের আছে। রাজশাহীতে দেশের সুনামধন্য বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসছে। হলিক্রসের পূর্ণাঙ্গ একটি শাখা রাজশাহীতে উদ্বোধন করা হয়েছে। নটরডমসহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছি। রাজশাহীতে এরই মধ্যে মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে।

অনুষ্ঠানে রাজশাহী কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্যে রাখেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. তানভীরুল হক, শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা, রাজশাহী কলেজ বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর, মাউশির সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. ইলিয়াস হোসেন, বিদেয়ী অধ্যক্ষ পত্নী সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ।

এ সময় রাজশাহী কলেজ বিদেয়ী অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান তার কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, যে কোন কাজে প্রতিই ভালোবাসা, সততা, স্বচ্ছতা থাকতে হয়। তিনি সেই কাজটি করে গেছেন। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন, রাজশাহী কলেজে সার্বিক উন্নতির জাদু টা কি? আমি এক কথায় বলি আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে ইতিবাচকভাবে বদলে যেতে দেখেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিয়েছি, প্লাট ফরম তৈরি করে দিয়েছি। যা অনেক প্রতিষ্ঠানই পারেনি। প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন আমি পারি, আমরা পারি। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেই তার নেতৃত্বেই পদ্মাসেতু তৈরি হচ্ছে। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্যেই কাজ করে যেতে হবে।

তিনি বলেন, কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেমন শাসন করেছি, তেমনি অন্তর থেকে ভালোবেসেছি। তাদের সঙ্গে আমার যে বন্ধন তা কখনো ছিঁড়বে না। এরমধ্যে দিয়েই কলেজের অন্য রকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমি বিশ^াস করি আমি চলে গেলেও এ কলেজের পরিবেশ এমনই থাকবে। রাজশাহী কলেজ আমার প্রাণ।

এর আগে সকালে অধ্যক্ষকে গার্ড অব ওনার প্রদান করে, রাজশাহী কলেজ বিএনসিসি ইউনিট ও রোভার স্কাউট। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজশাহী কলেজের সহশিক্ষা সংগঠনসহ বিভাগগুলো ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বেলা ১১ টার দিকে প্রামাণ্যচিত্র ও ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের শেষে প্রজন্মের পথিকৃৎ অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।


শর্টলিংকঃ