নানা নাটকীয়তার পর মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আসছেন শনিবার


ইউএনভি ডেস্ক:

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে শনিবার বাংলাদেশে আসছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান। প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য খোলার পথ খুঁজতে আগামী সোমবার ঢাকায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হতে পারে। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বৈঠকের আলোচ্যসূচি ও মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের তালিকা পায়নি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

নানা নাটকীয়তার পর মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আসছেন শনিবার

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৬ দিনের সফরে ঢাকায় আসার কথা ছিল কুলাসেগারানের। পরে তা স্থগিত হয়ে যায়। গত বুধবার জানানো হয়, শনিবার মধ্যরাতে আসবেন তিনি। এরপর ফের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয় যে, মালয় মন্ত্রী কবে আসবেন কিংবা আদৌ আসবেন কিনা।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনির হোসেন চৌধুরী সমকালকে শুক্রবার রাতে নিশ্চিত করেন, মধ্যরাতে নয়, শনিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবেন কুলাসেগারান। রোববার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে কুলাসেগারানের। তবে সফরসূচি কয়েক দফা পরিবর্তন হওয়ায়, সাক্ষাৎটি এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কূটনীতিক রীতিনীতি না মেনে অন্তত ১৫ বার কুলাসেগারানের সফরসূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি মালয়েশিয়ার এ আচরণ নতুন নয়। দেশটি বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি কতটা অসংবেদনশীল তা এই আচরণ থেকেই বোঝা যায়।

গত বৃহস্পতিবার প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছিলেন, কুলাসেগারানের সফর অনিশ্চিত। তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিলেন, জরুরি কাজের কারণে আপাতত আসছেন না মালয় মন্ত্রী। তবে এ সফরের বিষয়ে গতকাল মন্ত্রীর বক্তব্য জানা যায়নি।

গত ৬ নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়। গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ঢাকায় ফিরতি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ওই বৈঠক প্রায় তিন মাস পিছিয়ে সোমবার হবে বলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সফরসূচিতে বলা হলেও গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত তার সময় নিশ্চিত হয়নি।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র সমকালকে জানায়, জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয় দুই দেশের কর্মকর্তাদের পর্যায়ে। মন্ত্রীরা সেখানে আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে অংশ নিয়ে থাকেন। মালয়েশিয়া এখনও ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত করেনি।

গত ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশটি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে সম্মত হয়েছিল। ছয়টি সিদ্ধান্ত হয়েছিল ওই বৈঠকে। এর ভিত্তিতে দুই দেশের মতপার্থক্য দূর করে কর্মী নিতে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সোমবার বৈঠক হলেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার নিশ্চয়তা নেই।

বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে ২০১৬ সালে জিটুজি প্লাস চুক্তি করে পরের দিন তা স্থগিত করে মালয়েশিয়া। ২০১৭ সালে দেশটিতে কর্মী যাওয়া শুরু হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বন্ধ হওয়ার আগে জিটুজি প্লাসে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় যায়। মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৮ সালের মে মাসে ক্ষমতায় এসে অভিযোগ তোলে জিটুজি প্লাসে কর্মী নিয়োগে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। দুই দেশের সিন্ডিকেট এ টাকা লোপাট করেছে।

জিটুজি প্লাসে কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে কাজ দিয়েছিল মাহাথিরের পূর্বসূরি প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সরকার। তারা সিন্ডিকেট করে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান সিনারফ্ল্যাপ পেয়েছিল কর্মী নিয়োগের নিয়ন্ত্রণ। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

এরপর থেকেই কর্মী নিয়োগের নতুন পথ খুঁজতে আলোচনা চলছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত দুই বছরে অনেকবার বলা হয়েছে শিগগির বাজার খুলবে। কয়েক লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। তবে শেষ পর্যন্ত এ ঘোষণা বাস্তবে রূপ নেয়নি।


শর্টলিংকঃ