‘নিয়ম ভেঙে’ ৭ বছরের পুরোনো বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ


রাবি সংবাদদাতা:

প্রশাসনের এ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়মবর্হিভূত বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের মতে, ৭ বছর আগের বিজ্ঞপ্তি এখন আর বৈধ নেই। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছর পার হলে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। সেক্ষেত্রে আগের বিজ্ঞপ্তিতে যারা আবেদন করেছেন, তাদের আর আবেদনের প্রয়োজন পড়ে  না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও প্রধান ফটক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ৭ বছর আগে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। হঠাৎ করেই আগে আবেদন করা প্রার্থীদের মৌখিক সাক্ষাতকারের জন্য ডাকা হয়ছে। মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে উপাচার্যের বাসভবনে প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নেয়া শুরু হয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাক্ষাতকার নেয়া হবে।

প্রশাসনের এ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়মবর্হিভূত বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের মতে, ৭ বছর আগের বিজ্ঞপ্তি এখন আর বৈধ নেই। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছর পার হলে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। সেক্ষেত্রে আগের বিজ্ঞপ্তিতে যারা আবেদন করেছেন, তাদের আর আবেদনের প্রয়োজন পড়ে  না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২৫ হতে হবে উল্লেখ করে ২০১২ সালের জুলাইয়ে অধ্যাপক আব্দুস সোবহান উপাচার্যের দায়িত্বে থাকাকালীন ‘সেকশন অফিসার’ এর ৮টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। এরপর উপাচার্য পদে অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দীন ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিষ্প্রয়োজন হওয়ায় ওই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

গত সাত বছরে সেকশন অফিসার পদে ৫০টি পদ শূন্য হয়। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও অধ্যাপক আব্দুস সোবহান উপাচার্যের দায়িত্ব পান। গত মঙ্গলবার অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮৮তম সিন্ডিকেট সভায় তৃতীয় শ্রেণির চাকুরির জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়স নির্ধারণ করা হয়। এরপরই উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের আগের মেয়াদে দেওয়া বিজ্ঞপ্তির আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যাদেরকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছে তাদের অনেকেরই বয়স ৩৫ পার হয়ে গেছে। অনেকের বয়স আবার চল্লিশের কাছাকাছিও প্রায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র বলছে, ৭ বছর আগে যারা আবেদন করেছিল তাদের অনেকের চাকরির বয়সসীমা নেই। অনেকেই আবার বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করছেন। একদিকে চাকুরির বয়সসীমা বাড়ানো এবং আরেকদিকে পুরনো বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের বিষয়টি অনেক শিক্ষকই নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আবেদনের অনেকদিন পার হয়ে গেলেও কোন ডাক আসেনি। এতদিন পর হঠাৎ সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পাওয়াতে বেশ বিষ্মিত হয়েছেন বলে একজন আবেদনকারী জানান।

পুরনো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নেতিবাচক বলে জানান সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘যাদেরকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে তাদের কারও কারও বয়স পার হয়ে গেছে। কাজের জন্য কম বয়স্ক লোক দরকার। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় উপকৃত হবে। কিন্তু বেশি বয়সের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীই উপকৃত হবে, বিশ্ববিদ্যালয় নয়।’

সাবেক উপ-উপাচার্য চেীধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এভাবে নিয়োগ দেয়া স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে না। নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছর পেরিয়ে গেলে আবার বিজ্ঞপ্তি দিতে হয় এবং আগের প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সে রকমটা করা হয়নি।’

এ বিষয়ে জানার জন্য উপাচার্যের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত সহকারী মীর শাহজাহান আলী ফোন রিসিভ করে জানান, ‘উপাচার্য স্যার নিয়োগ বোর্ডে আছেন।’  তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, ‘এ বিষয়টি সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাপার। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তির জন্য আলাদাভাবে কোন সময়সীমা থাকে না।’


শর্টলিংকঃ