বসন্তবরণে রাবিতে প্রাণের জোয়ার


রাবি সংবাদদাতা:

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত’। তবে গাছে গাছে সবুজ কচি পাতার নাচোন, রক্তাভ শিমুল, পলাশের উচ্ছ্বাস, আমের মুকুল সাক্ষী দিচ্ছে পুষ্পপল্লবে শোভিত হয়েই এসেছে ঋতুরাজ। বুধবার বাঙলা সনের ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন, বসন্ত উৎসব। শীতের রুক্ষতা দূর করে প্রকৃতিতে ফুটে উঠে বসন্তের চিরচেনা রূপ।

বসন্তবরণ উৎসবে মেতে ওঠে রাবি শিক্ষার্থীরা। ছবিটি বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সামনে থেকে তোলা।

উৎসব আয়োজনে পিছিয়ে ছিল না উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। পহেলা ফাল্গুনে উৎসব-আমেজে ক্যাম্পাসে উদযাপিত হয়েছে বসন্তবরণ। বসন্তের প্রথম সূর্যোদয়ের পরপরই বাসন্তী সাজে সজ্জ্বিত তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বেলা গড়াতেই বাড়তে থাকে ভিড়। ক্যাম্পাসজুড়ে যেন হলুদ, কমলা ও বাসন্তী রঙের সমাহার। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নয়; আশেপাশের স্কুল-কলেজ ও রাজশাহী নগরীর বাসিন্দারাও ক্যাম্পাস আসেন বসন্ত উৎসবে মেতে উঠতে।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বসন্তের প্রথম দিনের সাঁঝ সকালে ছেলেরা হলুদ অথবা কমলা আর মেয়েরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে মেতে ওঠে উৎসবে। কারও খোঁপায় ঠাঁই পেয়েছে জারবেরা, কেউবা বেণিতে জড়িয়েছে হলুদ গাঁদা। পছন্দের মানুষকে ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’ অনেক তরুণ বেছে নিয়েছেন দিনটিকে। প্রত্যাশা বসন্তের আবেগে ভেসে সায় দেবেন তরুণী। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বাজছে কবিগুরুর সেই বিখ্যাত সঙ্গীত ‘আহা, আজি এ বসন্তে এতো ফুল ফোটে, এতো বাঁশি বাজে; এতো পাখি গায়..’। সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের নৃত্য।

রাবির চারুকলা অনুষদে বসন্তবরণ উপলক্ষ্যে চলছে পিঠা উৎসব। একটি স্টল থেকে পিঠা কিনছেন দর্শনার্থীরা।

বসন্ত বরণে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আড্ডাস্থলে আড্ড-গল্পে মেতে উঠে তরুণ-তরুণীরা। তবে চারুকলা চত্ত্বরে গেলে বোঝা যায় বসন্তের পরিপূর্ণতা। এখানে আনাগোনা বেশি বসন্তপ্রেমীদের। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দূর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে শীতের কাঁথা পোড়ানো হয়। অনুষদ প্রাঙ্গনে বসে দিনব্যাপী পিঠা উৎসব ও শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। পাশে মুক্তমঞ্চে চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এরপর বিভিন্ন বিভাগ, স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বসন্তকে বরণ করতে বের করা হয় শোভাযাত্রা। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে বরণ করছে বসন্তকে। বন্ধু-বান্ধবী, প্রেমিক-প্রেমিকা, কিংবা পরিবারের সঙ্গে এসেছেন সবাই বসন্ত বরণ উৎসবে। শুভেচ্ছা বিনিময় চলছে একে অপরের মধ্যে। সেই সঙ্গে মুঠোফোনে ধারণ করছেন সেলফি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ ছাড়াও শহীদ মিনার, টুকিটাকি চত্বর, পুরোনো ফোকলোর চত্বর, সাবাশ বাংলাদেশ মাঠ, পশ্চিমপাড়া, পরিবহন মার্কেট এলাকায় দিনভর উপচে পড় ভিড় লক্ষ করা যায়।

বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা বের করে চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বাসন্তী রঙের শাড়ি, মাথায় ফুলের বেণী জড়িয়ে এসেছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী নওরীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বসন্ত হচ্ছে বাংলার চিরচারিত ঐতিহ্য। রাজশাহীতে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে সবচেয়ে বড় করে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে একবারের জন্য হলেও সবাই আসে। খুব আনন্দ ও উৎসবে দিনটি কাটানো হয়।’

চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শঙ্কর তালুুকদার বলেন, চারুকলায় প্রতিবারই বসন্ত বরণে একটু ভিন্ন আয়োজনের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। এবার আমরা শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। মূলত মাদক প্রতিরোধে সম্পৃক্ত শিল্পকর্ম এখানে বেশি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এছাড়া পিঠা উৎসব চলছে। মুক্তমঞ্চে গান, নৃত্য পরিবেশনে দিনটি অন্যরকম ভাবে উদযাপনের চেষ্টা আমাদের সকলের।’


শর্টলিংকঃ