পরকীয়ার জেরেই পুঠিয়ায় গৃহবধূর মুখ ঝলসে দেয় প্রেমিক


নিজস্ব প্রতিবেদক :

পরকীয়ার জেরে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে শিশু সন্তানের সামনেই গৃহবধূ জেরিন আক্তার মিলির মুখে অকটেন ঢেলে আগুন দিয়েছিলো নাইম ইসলাম নামে এক যুবক। শুক্রবার ভোরে ঢাকার ধামরাইয়ের নিজ বাড়ি থেকে নাইমকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)।

গত ২৯ জানুয়ারি বানেশ্বর বাজারে গৃহবধূর মুখে অকটেন ঢেলে আগুন দেয়া নাইম ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায় শিশু সন্তানের সামনেই জেরিন নামের এক গৃহবধূর মুখে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন তার ভাই জিসান হোসেন। তবে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে হিমশিম খাচ্ছিলো স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। পরে পিবিআইয়ের ঢাকার বিশেষ টিমের সহযোগিতায় নাইমকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়।

আটক নাইম ইসলাম (২৩) ধামরাই থানার আইনগঞ্জের হাসান আলীর ছেলে। তিনি ধামরাই কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র। আর ভুক্তভোগী জেরিন আক্তার মিলি (২৬) রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। জেরিন এখন ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবদ শেষে নাইমের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, জেরিনের স্বামী মিজানুর রহমান একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তখন স্বামীর সঙ্গে জেরিনও ঢাকায় থাকতেন এবং ইডেন কলেজে ডিগ্রিতে পড়াশোনা করতেন। তখন ফেসবুকে ধামরাই কলেজের এইচএসসি’র শিক্ষার্থী নাইমের সঙ্গে জেরিনের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে। একপর্যায়ে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন জেরিন।

নাইম জানায়, জেরিন তার স্বামীর অজান্তে তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন। এরই মধ্যে জেরিন একটি সন্তানের জন্ম দেন। এরপর প্রায় তিন বছর আগে মিজানুর তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পুঠিয়ার বানেশ্বরে চলে আসেন। তারপরেও নাইমের সঙ্গে জেরিনের যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। গেল বছরের নভেম্বরেই নাইম ঢাকা থেকে বানেশ্বর এসে জেরিনের সঙ্গে দেখা করে যান। তবে এসবের কিছুই জানতেন না জেরিনের স্বামী মিজানুর।

মুখ ঝলসে যাওয়া গৃহবধূ। ফাইল ছবি।

নাইম পুলিশকে আরও জানায়, জেরিন তার প্রথম প্রেম। তাই বয়সে বড় হলেও স্বামী-সন্তান রেখে পালিয়ে এসে তাকে বিয়ে করার জন্য জেরিনকে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু জেরিন এতে রাজি না হয়ে তাকে ফেসবুকে ব্লক করে দেন। ফোনকল ধরাও বন্ধ করে দেন। তখন তিনি জানতে পারেন, আরও কয়েকজন ছেলের সঙ্গেও জেরিনের পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। স্বামীর অজান্তে তাদের সঙ্গে জেরিন সময় কাটান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নাইম, জেরিনের মুখে আগুন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পুলিশ জানায়, জেরিনের মুখ ঝলসে দেয়ার পরিকল্পনা করে গত ২৮ জানুয়ারি নাইম পুঠিয়ার বানেশ্বরে আসেন। এখানে এসে তিনি দুই বোতল অকটেন কেনেন। আর ঢাকার এক বান্ধবীর কাছ থেকে নিয়ে আসেন একটি বোরখা। সেটি পরে ২৯ জানুয়ারি ভোরে জেরিনের বাড়ির কাছে ওঁৎ পেতে থাকেন। জেরিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় যাওয়ার সময়, নাইম একটি মশালে অকটেন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে জেরিনের মুখে আঘাত করে পালিয়ে যান। জেরিন তখন তার সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। মশালের আগুনে সন্তানের সামনেই তার মুখ ঝলসে যায়।

রাজশাহী পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম আজাদ জানান, বোরখা পরে আক্রমণ করায় এ ঘটনার কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে নাইমকে শনাক্ত করেন। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি সব স্বীকার করেন। এখন তাকে পুঠিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাবে।


শর্টলিংকঃ