পরিবহন মালিকদের দাপটে গুটিয়ে যাচ্ছে বিআরটিসির বাস


বিশেষ প্রতিবেদক :

বেসরকারী পরিবহন মালিকদের বাধার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের সড়কগুলো চলতে পারছে না সরকারী মালিকানাধীন বিআরটিসির বাস। ফলে অনেক রুট থেকেই বাস প্রত্যাহার করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।তবে বাস মালিক সমিতির দাবি, নিয়ম-নীতি না মানায় বিআরটিসিকে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।

বিআরটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মনিরুজ্জামান বাবু জানিয়েছেন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৪টি ডিপোর অধীনে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন-বিআরটিসির ১১০টিরও বেশি বাস চলাচল করে বিভিন্ন জেলার রুটে। এক সময় উপজেলা রুটেও চলতো বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাস। কিন্তু পরিবহন মালিকদের বাধার কারণে অনেক রুটেই বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলো।

বিআরটিসির রাজশাহী ডিপোর বুকিং ইনচার্জ ডাবলু সরকার বলেন, রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে ডাবল ডেকার চলতো। এই বাসে বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে এসে আবার বিকেলে ফিরে যেতে পারতো। কিন্তু বাস মালিক সমিতির বাধার কারণে বিআরটিসির বাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।বিআরটিসির বাস চলাচল করায় তাদের নাকি ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা। কিন্তু সরকারী রাস্তায় সরকারী বাস চলতে পারবে না এটা কেমন কথা!

কেবল বাধাই নয়, সড়কে চলতে গিয়ে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে পথে পথে চাঁদাও গুণতে হয় খোদ সরকারী এই পরিবহনকে। নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। বিআরটিসির পাবনা ডিপো সুপারভাইজার সাদিকুর রহমানের অভিযোগ, প্রতি বাসে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। না দিলে বাস আটকে রেখে হয়রানি করে।

এদিকে গত ১২ এপ্রিল রাজশাহীতে সড়ক পরিবহন নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে বিআরটিসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে  তিনিও সরাসরি অভিযোগ করেন বাস মালিক সমিতির বিরুদ্ধে। সচিব বলেন, ‘পরিবহন মালিক সমিতি সরকারী সড়কেই সরকারী বাস চলতে দিচ্ছে না। এ কারণে অনেক রুটের বাসই প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বিআরটিসির বাস চলার ক্ষেত্রে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করলে সংকট কেটে যাবে’।

তবে বিআরটিসির বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ তুলেছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা।তারা বলছেন, নিয়ম না মেনে খেয়াল খুশি মতো রুটে বাস চালাচ্ছেন বিআরটিসির ইজারাদাররা। একারণে এমন সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুনজুর রহমানের দাবি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণায় বসে ঠিক করে দিয়েছে কোন রুটে বিআরটিসি চলবে আর কোনগুলোতে প্রাইভেট বাস চলবে। কিন্তু তা মানছে না বিআরটিসির ইজারাদাররা।

অধ্যাপক মুনজুরের অভিযোগ, কিছু নেতাকে বিআরটিসির বাস পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরা নিজেদের ইচ্ছেমতো রুট তৈরি করেছে।  তারা মাত্র ৫শ’ টাকা সরকারী খাতে জমা দিয়ে বাস চালাচ্ছেন। এজন্য দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তখাত বিআরটিসি। তবে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।


শর্টলিংকঃ