‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে এসডিজি অর্জিত হবে না’


কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ:
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের মতো প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যের ফাঁদে আঁটকা পড়ে আছে। এদের পেছনে ফেলে রেখে উন্নয়ন করলে তা কখনই টেকসই হবে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে সমাজের কোনো জনগোষ্ঠীকেই পেছনে ফেলে রাখা যাবে না।

শনিবার নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

দাতা সংস্থা হেকস-ইপার বাংলাদেশ ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা পল্লী সহযোগী বিষয়ক সংস্থা (আরকো) যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন-উর-রশীদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উত্তম কুমার রায়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন আরকোর নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী।

কর্মশালায় ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার’ বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেকস-ইপার বাংলাদেশের প্রকল্প কর্মকর্তা শেখর চক্রবর্তী পার্থ। অন্যদের মধ্যে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নবির উদ্দিন, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কর্মশালায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। ।
পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে মূলশ্রোতধারায় আনার লক্ষ্যে অধিকারভিত্তিক সংগঠন এনএনএমসির নওগাঁ জেল অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্মের সভাপতি ডিএম আব্দুল বারী, ‘বর্তমানে বাংলাদশে মানুষের মাথাপিছু গড় আয় তুলে ধরে পরিসংখ্যানগতভাবে মানুষের আর্থিক উন্নয়নের যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে বাস্তবিকক্ষেত্রে তা সবার জন্য সমান নয়। উন্নয়নের সফল কেবল মুষ্টিমেয় মানুষই ভোগ করছে।

দিনে-দিনে ধনী দরিদ্রের মধ্যে আয় বৈষম্য বাড়ছে। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ আরও বেশি করে প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। সারাদেশে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ৮০ লাখ। এই জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী পিছিয়ে রেখে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে কখনোই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়।’

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভূমি সমস্যা। ভূমির কারণে সমাজের সংখ্যাগুরু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। সরকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষদের জন্য যে উন্নয়ন বরাদ্দ দিচ্ছে তা সঠিকভাবে বন্টন না হওয়ায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছে না।

সমতলের আদিবাসীদের অধিকাংশ মানুষ ভূমিহীন হওয়ায় তাঁরা সরকারি খাস জমিতে বসবাস করে থাকেন। প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের মানুষেরা প্রায়ই তাঁদেরকে উচ্ছেদ করে ওই সব ভূমি দখল করে নিচ্ছে। ফলে প্রতি বছরই ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে দেশান্তরিত হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে বন্টন করতে না পারলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ আরও প্রান্তিক হয়ে পড়বে।’

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা। প্রান্তিক এই সব জনগোষ্ঠীর মুক্তির অন্যতম উপায় হচ্ছে শিক্ষা। তবে সরকারকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ নজর দিতে হবে।

প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক হারুন-উর-রশীদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন সরকার লক্ষ্য ঠিক করেছে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের। এসডিজি অর্জন করতে দেশের কোনো জনগোষ্ঠীকেই পিছিয়ে রাখা যাবে না। সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। সমাজে পিছিয়ে রয়েছে তাঁদের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখছে।

বিশেষ অধিকার ভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায় করছে। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব।’


শর্টলিংকঃ