বন্যা থেকে বাঁচতে দড়ি বেঁধে ৫০ ঘণ্টা গাছে ঝুলল দম্পতি!


ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে চারপাশ। রাজ্যের হুক্কেরির কাছে ইয়থনুর হাট্টি গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী কাড়াপ্পা জগান্নাভার (৩৫) ও তার স্ত্রী রত্নভা (৩০) বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম। এমন অবস্থায় তারা যা করলেন তাতে সবার আক্কেলগুড়ুম।


এই দম্পতির অদম্য ইচ্ছা বেঁচে থাকা। কিন্তু তাদের তখন বেঁচে থাকতে হলে এমন কিছু করতে হবে, যাতে পানিতে ভেসে না যান।আর সে জন্যই একটি গাছে নিজেদের দড়ি দিয়ে বেঁধে নিলেন এই দম্পতি। পুরো ৫০ ঘণ্টা নিজেদের গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধেই প্রাণ বাঁচালেন তারা।

ভারতের দা হিন্দুর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, কর্ণাটকের হুক্কেরির কাছে ইয়থনুর হাট্টি গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী কাড়াপ্পার জন্য এই দুটো রাত, একটা দিন বাকিদের থেকে অনেকটা বেশি কঠিন ছিল। তারা তাদের কোমরে একটি দড়ি বেঁধে গাছের অন্য প্রান্তে সেটা বেঁধে নেন। কাড়াপ্পা তার লুঙ্গিটি দিয়ে স্ত্রীকে বেঁধে নেন। যাতে কেউ কাউকে ছেড়ে না যান পানির তোড়ে। ইস্পাত প্লেটের একটি অংশ বের করে কোনওক্রমে তাদের মাথার উপরে একটি ছাতার মতো ব্যবহার করেছিলেন।

দা হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার তাদের কাছে এনডিআরএফের টিম গিয়ে পৌঁছায়। সে সময় তারা নড়াচড়া বা কথা বলার অবস্থাতে ছিলেন না। টানা ৫০ ঘণ্টা খেতে না পেয়ে এবং ঠাণ্ডায় কার্যত জড় পদার্থে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচার অসম্ভব আকাঙ্খাই তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল।

ওই দম্পতি দা হিন্দুকে জানায়, প্রথম যখন তাদের বাড়ির কাছে জল বাড়তে থাকে, তারা বাড়ির ছাদে উঠে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর যখন আরও জল বাড়তে থাকে, নিরুপায় হয়ে গাছে উঠে পড়াটাই তারা শ্রেয় মনে করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে কিছু লোকজন ওই দম্পতিকে নালার পাশে একটি গাছে দেখতে পান। তারাই খবর দেন পুলিশে। পুলিশ দমকল এবং ইমারজেন্সি সার্ভিসে জানায়। তারপরই তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ডা. এস ডি কালাসাড় ওই দম্পতির চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন। দি হিন্দুকে তিনি জানান, ওই দম্পতি কথা বলার অবস্থাতেই ছিলেন না। শুধু বলতে পেরেছেন সবই ঈশ্বরের কৃপা। আপাতত তারা আইসিইউতে রয়েছেন। অনেক ঘণ্টা খাবার না পেয়ে, খুব ঠাণ্ডায় থেকে হাইপোথার্মিয়া, হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় ভুগছেন তারা। আর এক দুদিন অবজার্ভেশনে রেখে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে।

জানা গেছে, কাড়াপ্পা জগান্নাভার ও তার স্ত্রী রত্নভা একটি ফার্মহাউসের দেখাশোনা করেন। খামারটি বাল্লারি নালার তীরে। এই নালাটি মার্কোন্ডেয় নদীর মাঝারি আকারের একটি শাখা। এই দম্পতি খামারেরই একটি পুরনো বাড়িতে থাকেন। তাদের ছেলে এক আত্মীয়দের সঙ্গে সুলেভবীতে থাকে। সেখানেই সে স্কুলে পড়ে।

পুলিশ কমিশনার সুমা লাতকর বলেছেন, আমি বলব এটি তাদের বেঁচে থাকার তাগিদের জোর। মঙ্গলবার কাড়াপ্পা বেশ কিছুটা ভয় পেয়ে তার খামারের মালিককে ফোন করে সবটাই বলেছিলেন, তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতেও চেয়েছিলেন।

কিন্তু তাকে তার মালিক ভয় না পেয়ে সেখানেই থাকতে বলেছিলেন, অভয় দিয়েছিলেন জল নেমে যাবে। কিন্তু বাস্তবটা একেবারে আলাদা ছিল। তাই বেচারারা বাড়ির ছাদে উঠেও নিস্তার না পেয়ে গাছে চড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

স্থানীয় বেলগাভি থানার পুলিশসহ এনডিআরএফ দল তাদের প্রাথমিকভাবে উদ্ধার করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিশেষ কাজ হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তা যশোদা ওয়ান্টাগোড় এবং নারায়ণ বরমণি আটকা পড়া দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়।


শর্টলিংকঃ