বাগাতিপাড়া পৌরসভার আড়াই কোটি টাকার ই-টেন্ডার জালিয়াতি


মাহবুব হোসেন, নাটোর :
নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভায় ই-টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকার কাজ মেয়রের ভাইয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম কন্সট্রাকশানকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মেয়রের ভাইকে কাজ দেওয়ার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াও সঠিকভাবে  মানা হয়নি। তবে পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেনের দাবী, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই সঠিক ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়েছে।

টেন্ডারে অংশ নেয়া ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারী দুটি জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বপূর্ণ শহরের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পযার্য়) অধীন দুটি প্রকল্পের মোট ৭টি রাস্তার কাজের জন্য ই-টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে দুটি গ্রুপে মোট  দুই কোটি ৪৩লাখ ৯১হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। তবে দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং ন্যাশনাল ইজিপি সিস্টেম পোর্টালে টেন্ডার আইডি দেওয়া হয় ২৭৩২৩০ এবং ২৭৩২৪০।

আগ্রহী ঠিকাদাররা উক্ত আইডিতে কোন দরপত্র না পেয়ে বাগাতিপাড়া পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগে যোগাযোগ করলে সহকারী প্রকৌশলী আকরামুজ্জামান জানান, প্রকৃত টেন্ডার আইডি হবে ২৮৩২৩০এবং ২৮৩২৪০। টেন্ডার আইডি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল হয় বলেও ঠিকাদারদের অভিযোগ

পরবর্তীতে উক্ত দরপত্রে মের্সাস রিজভী কন্সট্রাকশন , মেসার্স বাবলু এন্টারপ্রাইজ , মের্সাস রংধনু ট্রেডার্স এবং মের্সাস এম কন্সট্রাকশন নামে চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।  এর মধ্যে পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই মুক্তার হোসেনের মালিকানাধীন এম কন্সট্রাকশন নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে।

বাকি তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান  ৫ শতাংশ কম দরে দরপত্র দাখিল করে । তবে এই  তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। কথিত লটারীতে বিজয়ী হয়  মেসার্স এম, কন্সট্রাকশন।

রংধনু এন্টারপ্রাইজের পক্ষে ঠিকাদার সাইফুল্লাহ শেখ রিপন অভিযোগ করে বলেন, একটি দরপত্রের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পাঁচটি ধাপ পেরোতে হয়। ই-টেন্ডারের ক্ষেত্রে মাত্র দুটি বিষয় অর্থাৎ দরপত্র আহ্বান ও জমার কাজটি হয় অনলাইনে। দরপত্র মূল্যায়ন, কার্যাদেশ দেওয়া ও চুক্তিপত্র কাজগুলো দরপত্র আহ্বানকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থা ম্যানুয়ালি করে থাকে।

নিয়ম অনুযায়ী, যে ঠিকাদার সর্বনিম্ন দর দেবেন, যাচাই-বাছাই শেষে তাকেই কার্যাদেশ দেওয়ার কথা। কিন্তু বাগাতিপাড়া পৌরসভায় দুটি কাজের ই-টেন্ডারে ক্ষেত্রে তা হয়নি। দরপত্রের শুরু থেকেই অনিয়ম করা হয়েছে । দরপত্র বাছাইয়ে দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে দরপত্র দুটি বাতিলের জন্য তারা লিখিত আকারে প্রকল্প পরিচালককে জানিয়েছেন।

এবিষয়ে বাগাতিপাড়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আকরামুজ্জামান বলেন, ই-টেন্ডারের ক্ষেত্রে কোন জালিয়াতি করা হয়নি। সব কিছু নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। টেন্ডার আইডি নম্বর ভুল দেওয়ার বিষয়ে সদুত্তর দেন নি তিনি।

বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহবান করা হয়েছে । দরপত্র দাখিলের পর যাচাই বাছাই শেষে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে । প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় নির্ধারণ করবে কে কাজ পাবে। এ ক্ষেত্রে দূর্ণীতি বা অনিয়মের প্রশ্নই উঠে না। বরং মেসার্স রংধনু ট্রের্ডাস দরপত্রের সাথে ব্যাংকের জাল পে অর্ডার জমা দিয়েছে । এ ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা  নেবো।

এবিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম রাব্বী বলেন, যেভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া করা হয়েছে, নিশ্চিত এখানে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বঞ্চিত ঠিকাদারা যদি লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শর্টলিংকঃ