বাঘায় ২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা অনিশ্চিত!


আমানুল হক আমান, বাঘা :

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চর ভাঙ্গনের কারণে হুমকির মধ্যে পড়েছে চরকালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেকোন সময় পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি। এছাড়া পদ্মার চরে ৯টি প্রাথমিক ও দুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজার ৬০০‘শ  শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙন থেকে মাত্র ২০০ মিটার দুরে অবস্থান করছে চরকালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু, বিদ্যালয় থেকে পানি অবস্থান করছে মাত্র ৩০ মিটার দুরে। ফলে হুমকির মধ্যে রয়েছে এ বিদ্যালয়টি।

এছাড়াও লক্ষীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানিবন্ধী ১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পূর্ব চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ইতিমধ্যেই অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। চকরাজাপুর বাজার কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। এ বাজারের কিছু দোকান সরিযে নেয়া হয়েছে। অন্য দোকানগুলো সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে।

আলাইপুর থেকে লক্ষীনগর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে আলাইপুর, কিশোরপুর, গোকুলপুর, চরকালিদাসখালী, জোতকাদিরপুর, দিয়ারকাদিরপুর, চকরাজাপুর, লক্ষীনগরসহ ৯টি গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দেড় শতাধিক বাড়ি, আম বাগান, কুল বাগান, পেয়ারা বাগান, শাকসবজি, আখ ক্ষেত, বিভিন্ন ফসলি জমিসহ হাজার হাজার বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

 

এরমধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন মেম্বার আনোয়ার শিকদার, লক্ষীনগর চরের আবদুল মান্নান মন্ডল, মিজানুর রহমান, সামাদ মালিথা, কানু ফকির, হাফিজুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, হানু কাজী, সাইদুল ইসলাম, মজনু মোল্লা ও চকরাজাপুর চরের হাসান শেখ, জব্বার মন্ডল, হিরো মন্ডল, শাহিনা বেগম, ফজলু শিকদার, আকতার মন্ডল, রহমান মোল্লা হাফিজুর রহমান, আবদুল শিকদার, তোফাজ্জল শিকদার, হাসান শিকদার, বাক্কার শিকদার, ইসমাইল হোসেন, জহুরা বেগমসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি বাড়িঘর অন্যত্রে সরিয়ে নিয়েছে।

তারা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাবন করছে। তবে এরমধ্যে লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবুল কালাম, আবদুর রাজ্জাক, সোহেল শেখ, ফজল শেখ, মিষ্টার শেখ, দেলোযার শেখ, শাহাজান মৃধা, সামাদ আলী, শহিদুল ইসলাস, কানু ফকির, বাদর আলম, বদর উদ্দিন, চাঁন খা, বিজল হোসেনসহ ১৫টি পরিবারের প্রায় শতাধিক মানুষ গরু-ছাগলসহ আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া চরকারাজপুর ইউনিয়নের ১ হাজার ৮০০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঘার পদ্মার চরে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাসখালী, পূর্ব চকরাজাপুর এগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়।

চকরাজাপুর ও পলাশি ফতেপুর এই দুটি উচ্চবিদ্যালয়।চরকালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৬৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম আতংকে।

এ বিষয়ে চককালিদাসখালী সরকারি বিদ্যালয়ের চতুথ শ্রেনীর শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলামের বাবা নজরুল ইসলাম, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র পারভেজ আলীর বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন, সোহাগ আলীর বাবা বাবর শেখ বলেন, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে আতংকে থাকি। চারদিকে পানি আর পানি। এছাড়া ভাঙ্গন থেকে কিছু দুরে বিদ্যালয়টি অবস্থান করছে।

চরকালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাহাদুর হোসেন বলেন, পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০০ মিটার দুরে অবস্থান করছে ভাঙ্গন। আজ স্কুল ভালো দেখে গেলাম, কাল এসে দেখতে হবে স্কুল নেই। ফলে ছেলে-মেয়েদের ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, পানিবন্ধী ও গৃহহারা মানুষের তালিকা দেয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা কিছু ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রান দিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি বুঝে চরকালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইউএনও।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শনিবার সকালে চকরাজাপুর, লক্ষীনগর, চরকালিদাসখালী চরের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে ত্রান বিতরণ করা হয়ছে।

 


শর্টলিংকঃ