বাসায় গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর শিশুকে উপহার দিলেন ডিসি


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী আসমাউল হুসনার শিশু সন্তানকে বাসায় দেখতে গেলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক। তিনি শিশুটির পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী ও নগদ তিন হাজার টাকা দেন। তিনি বাসার মালিক এবং মহল্লাবাসীকে আসমাউল হুসনার ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে  ‘দুধের শিশু বাসায় রেখে হাসপাতালে কাজ করছেন মা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি দেখার পর আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে জেলা প্রশাসক রাজশাহী নগরের হেতেমখাঁ কারিগরপাড়ায় আয়া আসমাউল হুসনার বাসায় যান। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শরীফুল হক, নগর পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনার সাজিদ হোসেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ও পবা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সালাউদ্দিন আল ওয়াদুদ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, এই দুঃসময়ে যারা হাসপাতালে থেকে রোগীর সেবা করছেন তাঁদের প্রতি সবার সহানুভূতিশীল থাকা প্রয়োজন। তারা দেশের এই ক্রান্তিকালে মানবতার সেবায় নিয়োজিত। এই শিশুর মা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে সেখানেই তার পোশাক পরিবর্তন করে গোসল করে বাসায় ফিরবেন। এই নিয়ে কেউ আপত্তি করতে পারবেন না। যদি কেই আপত্তি করেন তাহলে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আয়া আসমাউল হুসনার স্বামী কুরবান আলীর হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রীর দুটি প্যাকেট তুলে দেন।

আসমাউল হুসনা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন। তার স্বামী রিকশাচালক। বাসায় ২০ মাসের বাচ্চা রেখে তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। বাচ্চাটি এখনো মায়ের বুকের দুধ খায়। করোনা সন্দেহে ভর্তি রোগীর সেবা করার কারণে এই টানা ছয় দিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে পারেননি। আরও কয়দিন ফিরতে পারবেন না সেটা নতুন রোগী ভর্তি হওয়া এবং তাদের শরীরে করোনা পরীক্ষার ওপরে নির্ভর করছে।

গত ১৯ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে বাসায় ঢুকতে গেলে বাসার মালিক তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের বাসা থেকে বের করে দিতে চান। এ সময় বাসার ভেতর দুধের শিশু মায়ের জন্য কাঁদছিল, আর মা আসমাউল হুসনা বাসার বাইরে কাঁদছিলেন। খবর পেয়ে রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়ির মালিককে বোঝান।

শেষ পর্যন্ত কথা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সেবা করলে আসমাউল হুসনা পরবর্তী ২১ দিন বাসায় আসতে পারবেন না। অবশেষে এই শর্তে বাসার মালিক রাজি হন। এরই মধ্যে গত রোববার করোনাভাইরাস সন্দেহে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালের আইসিইউ-তে নেওয়া হয়। এরপর থেকে আর মা আসমাউল হুসনা বাসায় ফিরতে পারেননি।


শর্টলিংকঃ