‘বিশেষজ্ঞদের মতামতেই ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ‘


ইউএনভি ডেস্ক:

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনের পাশাপাশি জীবিকার গতি সচল রাখতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামতেই ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত : কাদের

ওবায়দুল কাদের গণপরিবহন চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এক মতবিনিময় সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শুক্রবার বিকেল তিনটায় রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ অফিসে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সংসদ ভবনস্থ সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি সংযুক্ত হন।

মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার মার্চের শেষ সপ্তাহে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যু ও সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছালেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। জনগণের জীবনের পাশাপাশি জীবিকার গতি সচল রাখতে শেখ হাসিনার সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর এবং গণপরিবহন চালুর বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

সূচনা বক্তব্যে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী গণপরিবহন চালু করতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে মালিক-শ্রমিকদের ১২ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন।পরিবহন মালিক শ্রমিকদের উদ্দেশ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘লাখ লাখ শ্রমিক, মালিকের জীবনের সঙ্গে পরিবহনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনা একজন মানবিক মানুষ, তার মানবিকতা ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। অনুরোধ করবো,আপনারা যারা পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা চলমান সংকট মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাবেন না। সামান্য ভুল বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। আপনারা কিছু শর্ত বা নীতিমালা ঠিক করুন, কীভাবে যাত্রী সেবা দেওয়া যায় এবং পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায়।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, গণপরিবহন সংক্রমণের জন্য ভয়ানক হতে পারে। এখানে শ্রমিক, চালক, যাত্রী, পথচারি অনেকেই সংশ্লিষ্ট। একজন গাড়িতে উঠলে চেইন রিএকশনে অনেককে সংক্রমিত করতে পারে। তাই ঢালাওভাবে নয়, নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সীমিত পরিসরে যাত্রী সেবা প্রদানে আপনারা প্রতিপালনীয় শর্তগুলো ঠিক করুন। শুধু ঠিক করলেই হবে না, কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। করোনার মৃত্যুর মিছিলের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দেশেরে মানুষ দেখতে চায় না। তিনি বলেন, শুরুতে আমি কয়েকটি বিষয় আপনাদের নজরে আনতে চাই। তা হলো, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দুরত্ব ও শারিরীক দুরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বাস টার্মিনালে কোনভাবেই ভীড় করা যাবে না। ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা গাড়ির লাইনে দাঁড়াবেন এবং টিকেট কাটবেন।

মন্ত্রী বলেন, স্টেশনে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাসে কোন যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না। বাসের সকল সিটে যাত্রী নেয়া যাবে না। পরিবারের সদস্য হলে পাশের সিটে বসানো যাবে অন্যথায় নয়। যাত্রী, চালক, সহকারী, কাউন্টারের কর্মী সকলের জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক।

ট্রিপের শুরুতে এবং শেষে বাধ্যতামূলকভাবে গাড়ির অভ্যন্তরভাগসহ পুরো গাড়ীতে জীবানুনাশক স্প্রে করতে হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, যাত্রী উঠানামার সময় শারিরীক দুরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। চালক, কন্ডাক্টদের ডিউটি একটানা দেয়া যাবে না। তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোয়ারিন্টিন বা রেস্ট দিতে হবে। তিনি বলেন, মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে পথিমধ্যে থামানো, চা বিরতি এভয়েড করতে পারলে ভালো। কারণ সংক্রমণ কোথা থেকে হবে তা কেউই জানে না। যাত্রীদের হাতব্যাগ, মালামাল জীবানুনাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে। ভাড়া নির্ধারণের জন্য বিআরটিএ’র একটি কমিটি রয়েছে। সে কমিটি আপনাদের সাথে আলোচনা করে যুক্তিসঙ্গত ভাড়া চূড়ান্ত করবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আশা করব, আপনারা এমন সিদ্ধান্ত নেবেন এবং বাস্তবায়ন করবেন যেন গণপরিবহ সংক্রমনের উর্বরক্ষেত্র হতে না পারে। এমনিতেই জনগণ উদ্বিগ্ন। আপনারা জনগণের উদ্বেগকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করবেন। তিনি বলেন, অতীতে দেশ ও জাতির নানান সংকটে পরিবাহন খাত সাহসী এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখনও আমরা একটি পরীক্ষার মুখোমুখি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণপরিবহন সীমিত পর্যায়ে পরিচালনার যে সাহসী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা আপনাদের উপর দৃঢ় আস্থার বহিঃপ্রকাশ। আপনারা তার আস্থার প্রতি সম্মান রাখবেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, টার্মিনালে চালক, সহকারী ও শ্রমিকদের কাউন্সেলিং করুন, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন গাড়ি চালুর আগে। পুুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ ও মন্ত্রণালয় আপনাদের সহযোগিতা দেবে। পাশাপাশি নিয়ম অমান্য করলেও শাস্তির বিধান থাকবে জনস্বার্থে। বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট সক্রিয় থাকবে। তিনি বলেন, গণপরিবহন একটি সেবামূলক খাত। জাতির এ সংকটকালে আপনারা জাতির সেবক হোন। পরিবহনসমূহ যাতে সংক্রমণ কেন্দ্রে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকুন। সরকার গৃহীত কার্যক্রমে সহযোগিতা করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা সফলকাম হব। প্রধানমন্ত্রী জীবিকার কথা ভেবে যে সুযোগ দিয়েছেন। আশাকরি আপনারা তার সদ্ব্যবহার করবেন।


শর্টলিংকঃ