মঙ্গল শোভাযাত্রায় দেশের উন্নয়ন বার্তা বইবে ‘হাতি-ঘোড়া’


সুব্রত গাইন, রাবি:

সোমবার (০৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলার ‘পলাশতলা’ চত্বর। বাঁশের চটার বুননে কিছু একটা তৈরিতে মগ্ন একদল তরুণ-তরুণী। তবে তখনও তা ‘অবয়বহীন’! চারুকলা চত্বর ঘুরে বিকেলে সেখানে পুনরায় গিয়ে দেখা মিললো বিশাল আকৃতির একটি ‘ময়ূর’ এর ডামির। পাশেই ঘোড়া ও হাতির ডামি বানাতেও ব্যস্ত অন্য শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকালে এই ডামি নিয়ে নাড়া-চাড়া শুরু করেন শিক্ষার্থীরা

জানা গেল, গত চার/পাঁচ দিন ধরেই দিনরাত একনিষ্ঠভাবে চলছে কাজ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গান-গল্প, আড্ডা আর দুষ্টামিতে জমে উঠছে চারুকলা চত্বর। চৈত্র মাসের খর-রৌদ্রের শেষ দিনগুলো ঠিক এভাবেই কাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীদের।

কারণ বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে চারুকলা ঘিরেই মূল আয়োজন থাকে ৭৫৩ একরের রাবি ক্যাম্পাসে। শুধু ক্যাম্পাস নয়, রাজশাহীর সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রাও বের হয় এই চারুকলা থেকেই। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তাই চারুকলায় জোরেশোরে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্ষবরণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আরও তিন/চার দিন আগে থেকেই। এবারের শোভাযাত্রায় মূল আকর্ষণ হলো তিনটি ডামি। ডামি তিনটি হলো- ময়ূর, হাতি ও ঘোড়া।

ডামি তৈরিতে ব্যস্ত আরেকদল শিক্ষার্থী

তবে মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্যতম উপকরণ বিভিন্ন প্রাণীর রঙ-বেরঙের মুখোশ থাকছে না এবার। শোভাযাত্রায় মুখোশ ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা মেনেই তা বানানো হচ্ছে না বলে জানালেন চারুকলার বৈশাখ উদযাপনের মূল দায়িত্বে থাকা মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক।

তিনি জানান, বাংলা নববর্ষ বাঙালির শেকড়কে অনুসরণ করে। এবারের নববর্ষ উদযাপনে একটু ব্যতিক্রম ডামি রাখা হয়েছে। যেমন-ঘোড়ার ডামি ‘গতি’র বার্তা বহন করবে। এটি দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা বাংলাদেশে অর্থনীতির বর্তমান গতিকে উপস্থাপন করবে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই সেই ডামিটি স্পষ্ট রূপ নেয় ময়ূরে

ময়ূরের নাচ ও রঙিন পালক উৎসবের রঙিন উচ্ছ্বাস-আমেজকে নির্দেশ করবে। আর হাতির ডামি, যা বাংলাদেশের ধাবমান বৃহৎ অর্থনীতির প্রতীক হিসেবে বার্তা বহন করবে মঙ্গল শোভাযাত্রায়।

কনক কুমার পাঠক আরও জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও চারুকলা অনুষদের আয়োজনে থাকবে দু’দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। মেলা চলাকালে সঙ্গীত, নৃত্য, নাটকসহ বাঙালীয়ানা উৎসবে মেতে থাকবে চারুকলা চত্বর। তিনি সবাইকে বৈশাখী উৎসবে একপলক চারুকলার আসার আহ্বান জানান।

কথা হয় ডামি তৈরির কাজে মগ্ন ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুমনের সাথে।

তিনি জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান আমাদের শিক্ষার্থীদের। তেমনি প্রতিবারের মতো নববর্ষ উদযাপনের জন্য চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তবে আমরা এটা খুব উপভোগ করি।

সুমন বলেন, ‘চারুকলা অনুষদের প্রায় সকল বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই কাজে অংশ নেয়। শিক্ষকরাও তাঁদের জায়গা থেকে সাহায্য করে। আশা করছি এবারেরও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর নববর্ষ উদযাপন করবে।’

কবে নাগাদ নববর্ষের প্রস্তুতি শেষ হবে প্রশ্নে তিনি জানান, ডামিগুলো কাঠামো তৈরি করা প্রায় শেষ। এরপর ডামির উপর কাগজ লাগিয়ে রং করতে হবে। তারা বন্ধের দিনও কাজ করে যাচ্ছেন। যতোই তড়িঘড়ি করা হোক না কেনো, শেষ সময় পর্যন্ত কাজ করা হয়ে থাকে। বৃষ্টি না হলে কাজের মান বেশি ভালো হবে।

চারুকলা ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুমি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে কেমন মজা হবে তা এখনো বুঝতে পারছি না। কেননা এর আগে এভাবে নববর্ষ উদযাপন করার অভিঙ্গতা হয়নি। তবে বড় ভাই, আপু ও শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করছি খুব ভাল লাগছে। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে একটা উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আসলে এখন যে অনুভুতি সেটা বলে বুঝাতে পারবো না।’

মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনে থাকবে বৈশাখী উচ্ছ্বাসের প্রতীক রঙিন ময়ূর

এদিকে, চারুকলায় মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এরই মধ্যে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম বাংলা বিভাগ, নাট্যকলা, সঙ্গীত, ফোকলোর, আইন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা , মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ।

তারা এরই মধ্যে স্থান নির্ধারণ করে মঞ্চ তৈরির জন্য জায়গা ‘ধরে রাখা’ শুরু করেছে। চলছে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘নামমাত্র’ চাঁদা তুলে নানান সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের। সবমিলিয়ে বাংলা ১৪২৫ পেছনে ফেলে ১৪২৬ কে বরণে ব্যস্ত এখন শিক্ষার্থীরা। আর বাঙালী জীবনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য; পহেলা বৈশাখে মেতে উঠতে মুখিয়ে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়।


শর্টলিংকঃ