শান্তিনিকেতনের মহামায়া হোটেলের মায়াবী স্বাদ


এম এ আমিন রিংকু, কলকাতা থেকে:

মহামায়া হোটেল, রান্না যেখানে শিল্পকর্ম আর পরিবেশন যেন মমতাময়ী মায়ের পরম স্নেহেরই প্রতিফলন। এখানে রান্না থেকে শুরু করে পরিবেশন সবকিছুতেই থাকে পরম মমতার ছোঁয়া। আমিষ কিংবা নিরামিষ যে কোন মেন্যু একবার পরখ করলে করলে খাবারের অসাধারণ স্বাদ আর মনকাড়া সুবাস আপনার স্মৃতিপটে থেকে যাবে আজীবন।

মহামায়া হোটেল
মহামায়া হোটেল

বলছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর চৌরাস্তার শ্রীনিকেতন রোডের মহামায়া হোটেলের কথা। আজ থেকে ৭০ বছর আগে ১৯৫০ সালে গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠা করেন মহামায়া হোটেল। তখন থেকে এ অবধি পরম মমতায় অগণিত মানুষের রসনা তৃপ্ত করে যাচ্ছে হোটেলটি।

মহামায়া হোটেল

গেটে ঢুকতেই চোখে পড়বে কুপন কাম ক্যাশ কাউন্টার। বোর্ডে ঝুলানো মেন্যু দেখে নিতে হবে সমপরিমাণ টাকার কুপন। ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুপন সিস্টেমকে রেখে দিয়েছেন হোটেলের ব্যবস্থাপকরা। ঝকঝকে শালপাতার থালা বাটি আর কাসার জগে পরিবেশন করা পানি আপনাকে স্মৃতিকাতর করে তুলবে। লম্বা টানা টুলে খেতে খেতে আপনার মনে হবে যেন কোন বিয়ে বাড়ির আয়োজনের যোগ দিয়েছেন।

এখানে ৬০ রুপিতে মিলবে নিরামিষ মিল, ৭০ রুপিতে ডিম মিল, ১০০ রুপিতে মাছ মিল, মুরগির মিল মিলবে ১১০ রুপিতে, খাসির মাংস মিল ১৫০ রুপিতে, প্লেন তরকা ২৫ আর  ডিম তরকা ৩৬ রুপিতে এছাড়াও প্রতিটি রুটি মিলবে ৪ রুপিতে। এইসব মিলের প্যাকেজের সাথে ভাত ও ইচ্ছামত সবজি মিলবে অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই।

মহামায়া হোটেলের খাবারের অসাধারণ স্বাদের পেছনে কোন সিক্রেট রেসিপি আছে কিনা জানতে চেয়েছিলাম প্রধান পাঁচক রতিন্দ্র নাথ দত্তের কাছে। তিনি জানালেন, ‘আমাদের এখানে কোন বিশেষ মসলা ব্যবহার করা হয় না। যা রান্না করা হয় সবকিছুই বাছাই করা টাটকা উপকরণে। দিনের খাবার দিনেই শেষ হয়ে যায় তাছাড়া পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেই না। এসব বিষয়ই হয়তো আমাদের খাবারকে অনন্য করে তুলেছে।’

মহামায়া হোটেল

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বেড়াতে এসেছেন কলকাতার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রসূন বড়ুয়া। অপেক্ষা করছিলেন বসার জায়গা পাবার জন্য।তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আশেপাশে এত হোটেল থাকতে এখানে আসার কারন কি। তিনি বলছিলেন, ‘শান্তিনিকেতন আসলেই মহামায়া হোটেলে আসা হয় স্মৃতির টান আর অসাধারণ স্বদের খাসির ভুনা খাবার জন্য। বন্ধুরা মিলে শান্তিনিকেতনের এলে খেতাম এখানেই। এমনও হয়েছে অনেক সময় শুধু এখানে খাবার জন্য ৫ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে কলকাতা থেকে চলে এসেছি। আসলে এখানকার খাবারের স্বাদটা ভুলতে পারিনা।’

ক্যাশ কাউন্টারে ভিড় ঠেলে পেলাম মহামায়া হোটেলের পরিচালক প্রভাত চন্দ্র ভট্টাচার্য কে। শত ব্যস্ততার মাঝেও সদাহাস্য এই লোকটি জানালেন তাদের এমন আকাশচুম্বী সফলতার কথা। ‘বাবার সময় থেকেই আমরা এই হোটেলকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে না দেখে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেছি। যার কারণে লাভের চাইতে গুণগতমানকেই সবসময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। গোটা এলাকা খুঁজে দেখবেন আমাদের এখানে দাম সবচাইতে কম অথচ গুণগত মান সর্বোচ্চ। আসলে মানুষের স্মৃতিমাখা চেহারা দেখার জন্যই বসে থাকি এখানে, আর এর চাইতে সুখকর কোন জিনিস পৃথিবীতে কিছু আছে বলে আমার জানা নেই।’

মহামায়া হোটেলের খাবারের এমন সর্বোচ্চ গুণগতমান আর অসাধারণ স্বাদ বজায় থাকুক চিরকাল এমনটাই প্রত্যাশা ভোজনরসিকদের।

আরো পড়তে পারেন শান্তিনিকেতনে অনাবিল আনন্দে একদিন


শর্টলিংকঃ