যুক্তরাষ্ট্র-চীন এআই যুদ্ধ


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উন্নত চিপ হাতে পাওয়ার বেইজিংয়ের আকাঙ্ক্ষা যেন পূরণ না হয়, সে জন্য আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এতে মার্কিন চিপ নির্মাতাদের রাজস্ব কমবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। বাইডেন প্রশাসন মার্কিন কোম্পানির তৈরি উন্নত সেমিকন্ডাক্টর বিক্রির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দিয়েছে। সুপারকম্পিউটার গবেষণা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চীনের অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতেই এমন বিধিনিষেধ।

সূত্র বলছে, চীনের উন্নত চিপ বিক্রি করতে চাইছে এমন মার্কিন প্রতিষ্ঠান বা সেখানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করতে হবে বা বিশেষ লাইসেন্স পেতে হবে। উন্নত মার্কিন চিপ তৃতীয় দেশ হয়ে চীনে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে চিপ নির্মাতাকে মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার সাপেক্ষে আরও কয়েক ডজন দেশে পাঠানোর লাইসেন্স নিতে হবে।

জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে মার্কিন প্রশাসনের তরফ থেকে এমন বিধিনিষেধের কথা বলা হয়। তাদের দাবি, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা বা গোপন মার্কিন কোড ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে চীনের সামরিক বাহিনী এসব চিপ ব্যবহার করতে পারে। তবে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতারা বলছে, এমন বিধিনিষেধের ফলে রাজস্ব কমবে। বিশেষজ্ঞের মতে, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা চীনকে বিকল্প নতুন প্রযুক্তির দিকে ধাবিত করছে।

বিধিনিষেধ এনভিডিয়া, এএমডি এবং ইন্টেলের মতো মার্কিন চিপ নির্মাতাদের চীনে বিক্রয়কে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিছু চিপ নির্মাতা চীনা ক্রেতাদের কাছ থেকে তাদের আয়ের এক-তৃতীয়াংশ উপার্জন করে। কঠোর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লবিং করছে চীন।মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব বিধিনিষেধ স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক যান এবং গেমিং সিস্টেমের মতো বাণিজ্যিক সব অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহারের জন্য চিপ ব্যবহারকে প্রভাবিত করবে। সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করি। শক্তিশালী মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য যা অপরিহার্য। তবে একতরফা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে জাতীয় নিরাপত্তার অগ্রগতি ছাড়াই মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর ব্যবস্থাপনাকে ক্ষতি করে। কারণ, তা বিদেশি গ্রাহকদের অন্য কোথাও বিকল্প বাজার দেখতে উৎসাহিত করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে থেকেই নিজস্ব চিপসেট তৈরি করছে হুয়াওয়ে। সম্প্রতি ফাইভজি প্রযুক্তির ‘কিরিন ৯০০০এস’ উন্মোচন করেছে কোম্পানিটি। গুঞ্জন আছে, কোম্পানিটি আরও চিপসেট আনতে যাচ্ছে। আসছে ডিসেম্বরে নতুন চিপসেট উন্মোচন করা হতে পারে।চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাকে সরলীকরণ করছে। তারা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অপব্যবহার করছে এবং একতরফা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশ্লেষক এমিলি বেনসন বলেন, মাইক্রোসফট ও আমাজন পরিচালিত বিদেশি ক্লাউড সব পরিষেবায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সীমাবদ্ধ করবে বলে মনে হয় না। মার্কিন প্রশাসন সেই ব্যবসা বন্ধ করার কথা বিবেচনা করেছিল। চীনা সব প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের চিপ পেতে অন্য দেশকে এক ধরনের ‘ব্যাকডোর’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতিবিষয়ক প্রধান জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেন, অ-চীনা কোম্পানি তাদের বর্তমান সব পণ্যের আরও উন্নত সংস্করণ তৈরি করার কারণে নিয়ন্ত্রণের প্রভাব আরও সুস্পষ্ট হবে। চীন নিজেই এআই চিপের বিকাশে কাজ করতে পারে। ভবিষ্যৎ কয়েক দশকে ‘এআই’ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গেম চেঞ্জার হবে।

 


শর্টলিংকঃ