রংপুরে লোকাল যানবাহনে ধূমপান বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন সিটি মেয়র


নিজস্ব প্রতিবেদক:

পাবলিক পরিবহন বা গণপরিবহণে ধূমপান আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু রংপুর মহানগরীর অটোরিকশা, সিএনজি এমনকি আন্তজেলা রূটে চলাচলকৃত লোকাল বাসগুলোতেও দেদারছে চলে ধূমপান। এতে ধূমপায়ী নিজে ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি অধূমপায়ী যাত্রীরাও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফল বাড়ছে ধূমপানের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি।


তবে রংপুর মহানগরীর অভ্যন্তরের লোকাল যানবাহনগুলোতে (রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, লোকাল বাস) ধূমপান বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন নগরপিতা মো. মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। গণপরিবহণে ধূমপান বন্ধের পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি ২০ হাজার স্টিকার তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি রংপুর সিটিকে তামাকমুক্ত করতে নানা উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী- পাবলিক প্লেস অর্থাৎ ‘পাবলিক পরিবহন বা গণপরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-আধা সরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, হাসপাতাল-ক্লিনিক ভবন, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বাস টার্মিনাল, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শণী কেন্দ্র, চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা জনসমাগম স্থলে ধূমপান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ এসব পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে আইন অনুযায়ী ৩০০ টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে।


কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে রংপুর মহানগরীর সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রংপুরের অধিকাংশ পাবলিক প্লেসে ধূমপায়ীরা দেদারছে ধূমপান করছে। বিশেষ করে গণপরিবহনে অর্থাৎ অটোরিকশা, রিকশা, সিএনজি ও আন্তজেলায় চলাচলকৃত লোকাল বাসগুলোতে চলে দেদারছে ধূমপান। এতে করে ধূমপায়ীরা ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি যানবাহনে থাকা অন্য যাত্রীরাও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রংপুর মহানগরীর পুরো এলাকাজুড়েই প্রায় এমন চিত্র।

গতকাল বুধবার দুপুরে রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন বয়সী লোকের সমাগম। পাশেই বেশ কয়েকজন ধূমপায়ী সিগারেট টানছে। বাস টার্মিনালের অদূরেই হাইওয়ে রাস্তায় চলন্ত অটোরিকশায় এক যাত্রীকে সিগারেট টানতে দেখা গেল। অটোরিকশাটি থামিয়ে গণপরিবহণে কেন ধূমপায়ী করছেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর না দিয়ে সে সিগারেটটি ফেলে দেয়।

পাশেই নাজমীন নাহার নামে স্কুলপড়ুয়া এক যাত্রী বলে উঠলেন, ‘ধূমপানের গন্ধে আমাদের নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে- এজন্য ওনাকে (ধূমপানকারী) বেশ কয়েকবার সিগারেটটি ফেলে দিতে অনুরোধ করলেও তিনি ফেলেননি।’ একইভাবে গত মঙ্গলবার মহানগরীর পার্কের মোড়, শাপলা চত্ত্বর, পায়রা চত্ত্বর, মেডিক্যাল মোড়, দর্শনা, সাতমাথা, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তায় অটোরিকশা- রিকশা-সিএনজিতে চালক ও যাত্রীদের ধূমপান করতে দেখা গেছে।


এভাবে গণপরিবহনে দেদারছে ধূমপানের ফলে পাশের যাত্রীরাও সমান ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এতে ধূমপায়ী-অধূমপায়ীরা ক্যান্সার, আলসার, হাইপ্রেসার, হৃদরোগসহ ধূমপানজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের রংপুর অঞ্চলের এডভোকেসি অফিসার মো. তুহিন ইসলাম বলেন, ‘গ্লোবাল এ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-গ্যাট্স’ এর ২০১৭ রিপোর্ট অনুযায়ী- দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতকারী ৪৪ শতাংশ যাত্রী অর্থাৎ দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ধূমপানজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। রংপুরেও গণপরিবহনে যাত্রী এবং চালকদের অনেক বেশি ধূমপান করতে দেখা যায়। কাজেই রংপুরসহ দেশের গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি।’

‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’ এর রংপুর মহানগর সভাপতি কেএইচ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে গণপরিবহন তথা পাবলিক প্লেসে ধূমপানের যে শাস্তির বিধান রয়েছে তা অত্যন্ত নগন্য। এজন্য আইনটি পরিবর্তন হওয়া দরকার। পাবলিক পরিবহনে ধূমপান বন্ধে মাঝে-মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অত্যন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি সিটি করর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জনসচেতনা সৃষ্টি করলে পাবলিক প্লেস তথা পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের হার কমে আসবে।’

তবে রংপুর সিটি কর্পোরেশনকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে মহানগরী এলাকার গণপরিবহনে ধূমপানরোধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন মেয়র মো. মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘রংপুর নগরীতে লাইসেন্সকৃত প্রায় ৮ হাজার রিকশা ও অটোরিকশা প্রতিদিন চলাচল করে। মহানগরীর এসব পাবলিক পরিবহনে যাতে কেউ ধূমপান না করে সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যেই ২০ হাজার স্টিকার তৈরীর কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রিকশা-অটোরিকশায় এসব স্টিকার লাগানোর কাজ শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আছে কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ নেই। অন্তত পাবলিক প্লেসে যাতে ধূমপান না হয় এজন্য ‘স্মোকিং জোন’ তৈরীর উদ্যোগের কথা ভাবছি। এছাড়া এক মাসের মধ্যেই জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মহানগর এলাকায় আমরা বড় ধরনের একটি র‌্যালি করার উদ্যোগ নিয়েছি।’


শর্টলিংকঃ