রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী


সুব্রত গাইন, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আশির দশকে ক্যাম্পাস কাঁপানো ছাত্র সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী। তবে আস্তে আস্তে যোগ্য কর্মীর অভাবে পুরো স্থবির হয়ে পড়ে সংগঠনটি। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর সর্বশেষ ২০১৫ সালে একবার কমিটি গঠন করা হয়। তবে বেশিদিন টিকেনি। এর প্রায় তিন বছর কার্যক্রম অচল থাকার পর ২০১৯ সালে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কর্মীর অভাবে এখনো ঘোষণা করা হয়নি হল কমিটি। রাকসুকে কেন্দ্র করে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে যোগ্য কর্মী সংগ্রহ করে সক্রিয় হচ্ছে বহুদিন বন্ধ থাকা ছাত্র সংগঠনটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশির দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচাইতে প্রভাব বিস্তারকারী সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী। ওই সময় রাকসু নির্বাচনে সংগঠনটি বর্তমান ছাত্রলীগ ও জাসদের বিরুদ্ধে প্যানেল ঘোষণা করে। সেই নির্বাচনে ছাত্রমৈত্রীর প্যানেল থেকে ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী-২ আসনের সাংসদ। আশির দশকের প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠন হলেও পরে দলটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ হলো কর্মী সংকট ও দলীয় কোন্দল। একপর্যায়ে সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ সংগঠনটির নতুন কমিটি দেওয়া হয় ২০১৫ সালে। এরপর প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর মাহবুব আলমকে আহ্বায়ক ও রিফাত হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর অনেক চেষ্টা করেও দলটি দাড়ানোর মতো অবস্থানে আসতে পারেনি। ২০১৮ সালে একবার কমিটি দেওয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করা হলেও কর্মীর অভাবে তা আর হয়ে উঠেনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও জোবায়ের জোহাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে বর্তমানে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি থাকলেও দিতে পারেনি হল কমিটি।

প্রায় ৩ বছর সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে নেতাকর্মীরা বলেন, ‘অনেকে বাম রাজনীতিকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা দেয়। তারা মনে করে বাম রাজনীতি করলে ধর্মের ওপর বিশ্বাস থাকে না, সে নাস্তিক হয়ে যায়। যার ফলে এই সম্পর্কে সবার নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। তাছাড়া ছাত্র রাজনীতিতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছে। যারাও রাজনীতি করছে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে। আবার যারা আসে তাদের আন্তঃকোন্দলে কমিটি ভেঙে যাচ্ছে। তবে আমরা আবার গুছিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি এবং আমাদের কর্মী সংগ্রহ চলছে, আগামী এক মাসের ভিতর হল কমিটিও দেওয়া হবে।’

অনেক ধরে নিস্ক্রিয় থাকার পরও রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হতে শুরু করেছে দলটি। সেই লক্ষে রাকসু সংলাপ কমিটির কাছে জমাও দিয়েছে তাদের গঠনতন্ত্র। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংলাপ কমিটির বৈঠকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র স্থাপনসহ তেরো দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আশানুুরূপ ফলও পাবেন বলে দাবি করছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

রাকসু নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর নতুন কমিটির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কমিটি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছে। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। তবে রাকসু নির্বাচন নিয়ে আমরা আশাবাদী। আশা করছি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবার আগের অবস্থায় চলে আসবে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।

তবে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা চান সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এ বিষয়ে তারা বলেন, ডাকসু নির্বাচন দেখে রাকসুর প্রতিও আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। এখন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে আমরা কাজ করার সুযোগ পাবো। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের চাপ যেনো না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান থাকলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব বলে জানান তারা।

সংগঠনের নেতাকর্মীরা আরও বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চাই। আগের নেতাকর্মীরা যেমনটা করেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বর্ধিত ফি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন ধরণের অরাজকতা বন্ধ করতে চাই। আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান বৃদ্ধি ও সিট বাণিজ্য বন্ধ করা হবে এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে কাজ করে যাবো।’

প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী আত্মপ্রকাশের বিষয়টি অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো ইতিবাচকভাবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাম ছাত্র সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি মনির হোসেন বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ভিতরেই ছিলো। যখন ওয়াকার্স পার্টি মহাজোটের সাথে যোগ দেয় তখন এটা বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী নামে আরেকটা শাখা চালু করে। তবে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ওই নামে থেকেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রায় তিন বছর পর আবারও সংগঠনটি সক্রিয় হচ্ছে রাকসুকে কেন্দ্র করে। আমরা অবশ্যই এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমরা চাইবো ছাত্র সংগঠনগুলো সহাবস্থানে থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।’


শর্টলিংকঃ