রাজশাহীতে কলেজছাত্রী লিজা আত্মহননে পুলিশের কোনো ‘গাফিলতি’ নেই


নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজশাহীতে থানার পাশেই নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে কলেজছাত্রীর আত্মহননের ঘটনায় পুলিশের কোন গাফিলতি খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ-আরএমপির তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, কলেজছাত্রী লিজা রহমান তার স্বামীর দ্বারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অভিযোগ করতে এসেছিল শাহমখদুম থানায়। কিন্তু এটি কোন ফৌজদারি অপরাধ না হওয়ায় মামলা রেকর্ড করেননি ওসি।

পরে  লিজাকে দুই নারী কনস্টেবলের সঙ্গে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে এসেই লিজা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে এ ঘটনাটি শাহমখদুম থানার ওসি হিসেবে রেকর্ড রাখেন নি। তাই তাকে কৈফিয়ৎ তলবের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এর আগে আরএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) সালমা বেগমের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবিরের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

এদিকে, কলেজছাত্রী লিজা রহমানের আত্মহননের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার লক্ষীনারায়নপুর গ্রাম হতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাখাওয়াত রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, লিজার বাবা আলম মিয়া বাদী হয়ে বুধবার (০২ অক্টোবর) রাতে মহানগরীর শাহ মখদুম থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তার মেয়েকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আলম মিয়া।

এ জন্য লিজার স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া শ্বশুর মাহাবুব আলম খোকন ও শাশুড়ি নাজনিন বেগমকে আসামি করা হয়েছে। শাহ মখদুম থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) বণী ইসরাইলকে মামলাটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর নগরীর শাহমখদুম থানায় লিজা স্বামী ও সাখাওয়াত ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে যান। কিন্তু অভিযোগ না নেয়ায় ক্ষোভে ও অপমানে থানা থেকে বেরিয়েই নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় সে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে ওইদিনই ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা এরপর বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায় লিজা। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বুজরুক বোয়ালিয়া গ্রামে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রংপুরের গাইবান্ধা জেলার নিজ গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে লিজার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। বুধবার (০২ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত লিজার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের পর নিজের আগুনে আগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত লিজার মরদেহ বুধবার রাতে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।


শর্টলিংকঃ