রাজশাহীতে ১০৩ টাকায় চাকরি পেল ৮৮ তরুণ-তরুণী


এম এ আমিন: 

রাজশাহীতে মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরী পেল ৪৪ জন নারী ও ৪৪ জন পুরুষ। আজ রবিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী পুলিশ লাইন্স মাঠে রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল পদের ফলাফল ঘোষণা করেন এসপি মো. শহিদুল্লাহ। ফলাফল ঘোষণার সময় আবেগ ঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরী পেয়ে আনন্দে অনেকেই কেঁদে ফেলেন।

এবার রাজশাহী জেলায় মোট ৫১৪১ জন নারী পুরুষ প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তারমধ্যে ৮৭৯ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪২৪ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়। ৪৪ জন নারী ও ৪৪ জন পুরুষ মোট ৮৮ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়।

পুরুষ ৪৪ জনের মধ্যে সাধারণ কোটায় ২৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১১ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ৩ জন ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ২ জন। আর নারী ৪৪ জনের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৪২ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১ জন ও পুলিশ পোষ্য কোটায় ১ জন। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বাগমারা উপজেলার ঝিকরা গ্রামের বাবা হারা এতিম হাবিবুর রহমান ১০৩ টাকায় চাকুরী পেয়ে আনন্দে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন তার জীবনের করুণ গল্প। হাবিবুরের বাবা মারা গেছে অনেক আগেই। ছোট ভাই প্রতিবন্ধী। সংসার চালানোর জন্য কৃষিকাজের পাশাপাশি লেখাপড়াটা অনেক কষ্টে চালিয়ে গেছেন। আজ তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সার্থক হয়েছে পরিশ্রম।

মোহনপুর উপজেলার বেড়াবাড়ি গ্রামের ভ্যান চালকের ছেলে মোঃ সজীব। তিনিও সব ধাপ পেরিয়ে মাত্র ১০৩ টাকায় কনস্টেবল পদের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাবা অনেক কষ্ট করে সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ২০০ টাকা দিয়েছিলেন আবেদন করার জন্য। ১০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট আর ৩ টাকা ফর্মের জন্য ব্যয় করেছেন । ১ টি টাকাও অতিরিক্ত লাগেনি। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে বলছিলেন ‘ বাবা হয়ত বিশ্বাস করবেনই না আমি পুলিশে চাকুরী পেয়েছি। কিন্তু এটাই আজ সত্য’।

রাজপাড়া থানার চন্ডিপুরের ইভা খাতুনের গল্প আরও করুণ । বাবা তাদের ছেড়ে অন্যত্রে ঘর বেঁধেছে ইভার শৈশবকালেই। মা মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার ও ইভার লেখাপড়া খরচ চালিয়ে গেছেন। ইভা জানান ‘ মা সব সময় বলতেন আমরা সততার সাথে কষ্ট করে বেঁচে আছি, দেখবি একদিন এ সততার মূল্য আমরা পাবই। আজ আমার মায়ের কষ্ট সার্থক হয়েছে। আমি পুলিশে চাকুরী পেয়েছি, আমার আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। শুধু আজীবন সততার সাথে দেশের সেবা করে যেতে চাই।

এ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছিলেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ। তিনি জানান, সার্কুলার হওয়ার পর থেকে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত প্রতিটা ধাপ শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেককে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাছাড়াও আগে থেকে দালাল ও প্রতারক চক্র যাতে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সেজন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কোন পার্থিরই চুড়ন্তভাবে নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত ১০৩ টাকার বেশি এক পয়সাও খরচ হয় নি। আমরা অঙ্গিকার করেছিলাম ১০৩ টাকায় চাকুরী দেওয়ার জন্য আজ আমাদের অঙ্গিকার বাস্তবায়িত হল। তিনি আরও বলেন আমি আশা করি আজ যারা নির্বাচিত হল তারা প্রত্যেকে শতভাগ সততার সাথে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।


শর্টলিংকঃ