রাবিতে ‘ঔষধি বাগান’ কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের ছক!


হোসাইন মোহাম্মদ সাজ্জাদ, রাবি:

অপরূপ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। ৭৫৩ একরের ক্যাম্পাসজুড়ে হরেক রকমের ছোট-বড় গাছ-গাছালি। ফল থেকে শুরু করে ঔষধি, সব ধরনের গাছের দেখা মিলবে মতিহার চত্বরে। তবে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে সাম্প্রতি ব্যাপকহারে কাটা  হচ্ছে ক্যাম্পাসের গাছ। ফলে ক্রমেই এক সময়ের দেবদারু ঘেরা মতিহার হয়ে উঠছে ইট-পাথরের ‘ক্যাম্পাস’।

জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনে ও শহীদ হবিবুর রহমানের হলের সামনের বিস্তীর্ণ মাঠে ঔষধি বাগান গড়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ। যেখানে হরেক রকমের দরকারি ঔষধি গাছ রয়েছে।

তবে অযত্ন আর অবহেলায় কারণে দিনে দিনে নষ্ট হতে বসেছে বাগানটি। বাগানের পাশেই ফেলা হচ্ছে ময়লা। চারপাশে ঘেরা না থাকাতে হুটহাট করে যে কেউ বাগানে ঢুকে নষ্ট করছে গাছ।

প্রশাসনকে বারবার বাগানের চারপাশে ঘিরে দেয়ার বিষয়ে অবগত করার পরেও সে বিষয়ে প্রশাসন কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন ফার্মেসী বিভাগের সভাপতি।

তবে  কর্তৃপক্ষ বলছে- বাগানে তেমন কোন ঔষধি গাছ নেই। সেখানে ২০তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেটা ঘিরে দেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছে না কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পিছনে ও শহীদ হবিবুর রহমানের আবাসিক হলের সামনে ঔষধি বাগানটি অবস্থিত। বাগানের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে আবর্জনা ফেলার জায়গা। প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবধরনের ময়লা-আবর্জনা এখানে নিয়ে এসে ফেলা হয়।

সেগুলো পচে সেখান থেকে দূর্গন্ধ ছড়ায়। এতে করে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে একইসঙ্গে বাগানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তার পাশে হওয়াতে শিক্ষার্থীদের চলাচলে কষ্ট হয়। বাগানের চারপাশে সীমনা প্রাচীর না থাকায় থাকার হুটহাট করেই যে কেউ ঢুকে যেতে পারে। অনেকেই বাগান ঘাস কাটতে আসে।

ঔষধি গাছ চিনতে না পারার কারণে ঘাস মনে করে সেগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই না বুঝে বাগানে ঢুকে গিয়ে গাছের ডাল-পালা  ভেঙে দেয়। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিনের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে বাগানটি।

স্টুয়ার্ড শাখার সুপার ভাইজার সাগরের সঙ্গে ময়লা ফেলার বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি স্থানে ময়লা ফেলার জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। সে অনুযায়ী আমরা সেখানে ময়লা ফেলতাম। ফার্মেসী বিভাগ থেকে নিষেধ  করায় পরে সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে না। তবে, সেখানে কিছু ময়লা-আবর্জনা আছে যেগুলো পঁচে গেছে। আমরা দ্রুতই সেগুলো গর্ত করে মাটির নিচে পুঁতে দিবো।

ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতার-উজ-জামান চৌধুরী বলেন, এখানে সংরক্ষিত এলাকা লিখে দেওয়া থাকা সত্ত্বেও যে কেউ ঢুকে যায়। বাগানের চারপাশে ঘিরে দেয়ার বিষয়ে বারবার প্রশাসনকে অবগত করেছি।  তবে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন শুনছি সেখানে বহুতল ভবন হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, প্রথমে বাগানটি ফার্মেমি বিভাগ শুরু করেছিল। তবে সেভাবে তারা যত্ন নেয়নি। সেখানে কয়েকটি তুলশি গাছ আর দু-একটা এ্যালোভেরা গাছ ছাড়া তেমন কোন ঔষধি গাছ নেই।

উপ-উপাচার্য আরো বলেন, ওই স্থানে ২০তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবনের কাজ শুরু হলে এমনিতেই বাগানটি ধ্বংস হয়ে যাবে। সেজন্য বর্তমানে সেটি ঘিরে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি না।


শর্টলিংকঃ