রাবির প্রথম প্রশাসনিক ভবনের মালিকানা হস্তান্তর, শিক্ষকদের ক্ষোভ  


বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক :

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রথম প্রাচীনতম প্রশাসনিক ভবনের মালিকানা (বড়কুঠি ভবন) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৯ জুন) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত ৪৯১ তম সিন্ডিকেট সভায় বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। যদিও সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র অধ্যাপক এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা জানিয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক

এর আগেও ২০১১ ও ২০১৬ সালে বড়কুঠির মালিকানা চেয়েছিল রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। শিক্ষকদের প্রতিবাদের মুখে সিটি কর্পোরেশন ভবনটি নিতে পারেনি।

সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, সিন্ডিকেটের তিন সদস্য ওই সময়ই বিষয়টির প্রতিবাদ করেন। তারা এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পরের দিন রবিবার (৩০ জুন) তিন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আব্দুল আলীম, অধ্যাপক হাবীবুর রহমান ও মোহা. মনিরুল হক এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত দেন।

সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘বড়কুঠি ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীনতম ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেকড় ভবনটিতে জড়িয়ে আছে। ভবনটি আমাদের আবেগের জায়গা। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের মালিকানা আমরা অন্য কাউকে দিতে পারি না।’

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করেছে বলেই যে ভবনটি তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হবে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের মত বড়কুঠিও আমাদের সম্পত্তি। কার্জন হল যেমন তারা নিতে পারে না তেমনি বড়কুঠি ভবনটিও তারা নিতে পারে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইন-১৯৭৬ আইন অনুযায়ী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ভবনটি সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ভবনটি সংস্কার করে হেরিটেজ করার জন্য ২০১৮ সালের জুনে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় একটি গেজেট প্রকাশ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি তোলা হয়। সভায় আলোচনা সাপেক্ষে ভবনটির মালিকানা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হস্তান্তর করা হয়।

জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, ‘সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। আমরা সরকারের বিরোধিতা করতে পারি না। এ ছাড়া সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ভবনটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

উল্লেখ্য, রাজশাহী শহরের পদ্মাতীরে বড়কুঠি ভবনটি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মাণ করা হয়। এটি প্রথমে ডাচদের ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। দেশভাগের পর ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে বড়কুঠি সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয়। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে প্রথম প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। সেই থেকেই ভবনটির মালিকানা পায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


শর্টলিংকঃ