শত বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটে


ইউএনভি ডেস্ক:

ব্যবসায় খাতের শীর্ষ বৈশ্বিক নেতারা মনে করেন,কোভিড–১৯ বা করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি বিগত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক অবস্থায় পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিজনেস টোয়েন্টিখ্যাত (বি২০ বা টোয়েন্টি) প্রভাবশালী ব্যবসায়িক জোটটি জরুরি সংস্কার পদক্ষেপসহ ২৫ দফা সুপারিশ করেছে।

জোটের নেতারা মনে করেন, সার্বিক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলে তা বিশ্ব অর্থনীতিকে করোনাভাইরাসের আগের অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।

বি২০ জোটের নেতারা গ্রুপ টোয়েন্টি বা জি২০ জোটের আসন্ন সম্মেলনে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী ২১ ও ২২ নভেম্বর জি২০ জোটের সদস্যদেশ সৌদি আরবে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবদ্ধি অর্জনের ধারায় উত্তরণ’।

বি টোয়েন্টি বা বি২০ হচ্ছে গ্রুপ টোয়েন্টি (জি২০) জোটের সদস্যদেশগুলোর ব্যবসায়ীদের জোট। আর জি২০ হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিগুলোর জোট। বি২০ জনগণের ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় জোর দিয়েছে। বি২০–কে জি২০–এর ব্যবসায় খাতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) এনগেজমেন্ট গ্রুপ বলেও ডাকা হয়।

বিজনেস টোয়েন্টির (বি২০ বা টোয়েন্টি) চেয়ারম্যান ইউসেফ আল–বেনিয়ান বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।

বি২০ জোটের চেয়ারম্যান ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সৌদি অ্যারাবিয়ান বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ইউসেফ আল–বেনিয়ান বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর লেগে যাবে। সে জন্য করোনাভাইরাসজনিত চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করায় জোর দিয়ে বলেন, নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী নেতাদের সত্যিকার অর্থেই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, দেশগুলো করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমন, নীতিমালার অনিশ্চয়তা দূরীকরণ, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন নিরসন, আর্থিক ভঙ্গুরতা কাটিয়ে ওঠা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ কমতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এতটা খারাপ অবস্থা আর দেখা যায়নি।

বি২০ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সাবেক মহাপরিচালক রবার্তো অ্যাজভেদ, মাস্টারকার্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান অজয় বাঙ্গা, দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরশেনর গ্রুপ চেয়ারম্যান মার্ক টাকার প্রমুখ।

বিজনেস টোয়েন্টি গ্রুপ অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোসহ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো ইত্যাদি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগব্যবস্থা জোরদার করতে বলেছে। এগুলোর জন্য জনগণের ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে নারী ও যুব সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে, যাতে কোম্পানিগুলো কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল পায়।

বি২০ নেতারা পৃথিবীর সুরক্ষায় জি২০ নেতাদের এখন থেকে আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত কার্বন দূষণ কমানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে।

বি টোয়েন্টি নেতারা জি২০ জোটকে ফাইভ জি, ওয়্যারলেস টেকনোলজি বা তারবিহীন প্রযুক্তি, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ইন্টারনেটের আরও উৎকর্ষ সাধনে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব দুর্নীতি ও জালিয়াতি ঘটছে, সেগুলো রোধের পদক্ষেপ গ্রহণে জোর দিতে বলেছে।

বি২০ নেতারা সম্প্রতি এক বৈঠকে ২৫ দফা সুপারিশ তৈরি করেন। ২৬ ও ২৭ অক্টোবরের সম্মেলনে এসব সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

বিশ্ব অর্থনীতির তথা বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের ৮০ শতাংশই হচ্ছে জি২০ জোটের সদস্যদেশগুলোর।

১৯৯৯ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জি২০ জোট যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে জি২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এতে জোটের সব দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন, সিদ্ধান্ত নেন। বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে


শর্টলিংকঃ