জন্মদিনে ভালবাসায় সিক্ত হাসান আজিজুল হক


রাবি সংবাদদাতা :

জন্মদিনের উৎসবে অনুভূতি প্রকাশ করেন হাসান আজিজুল হক।

৮০তম জন্মদিনে মানুষের শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও ফুলেল শুভেচ্ছা সিক্ত হলেন বাংলা ছোটগল্পের রাজপুত্র উপমাহদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। জন্মোৎসবে শনিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। ‘হাসান আজিজুল হকের ৮০তম জন্মোৎসব পরিষদ’ এ নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে।

রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। পরে হাসান আজিজুল হকের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাহিত্যপত্র পাঠ করেন কবি কুঞ্জের আরিফুল হক কুমার। এরপরই কথাসাহিত্যিকের হাতে সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক দেন। সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ রাজশাহীর বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।

সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠান।

কথাসাহিত্যিককে নিয়ে লেখা মানপত্র পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা। এ সময় তাঁকে নিয়ে লেখা একটি স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহীর কবিকুঞ্জের সভাপতি ও জন্মোৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক । অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিকের কন্যা সুলতানা শরমিন জাহান তোতনের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নাতি অনির্বাণ হাসান অনিন্দ্য পিয়ানো বাজিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মন কাড়েন।

হাসান আজিজুল হককে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানান রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।

অনুষ্ঠানে হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘জীবনে অনেক কিছুর অভাব হয়েছে কিন্তু ভালবাসার অভাব হয়নি। আজ আমি ৮০ বছরের পর্দাপণ করলাম। এবয়সে আমাকে যে সম্মান দেখানো হয়েছে। আমি সত্যিই অবিভূত। আমি আয়োজকদের কাছে কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাজশাহী শহরটি বাংলাদেশের রাজধানী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।এ শহরেই জীবন কাটাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তিনি চাইলে রাজশাহীর চেয়েও অনেক নামী শহরে গিয়ে নিজেকে আরও বড় জায়গায় রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। তিনি এখানে থেকে রাজশাহীকে দেশের ইতিহাসে সম্মানিত করেছেন।’

গণসংবর্ধনায় রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাবির সাবেক উপাচার্য এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার অধ্যাপক ড. এম সাইদুর রহমান খান।

রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দীন বলেন, আজ এমন এক কিংবদন্তী মানুষের জন্মদিন, যার হাত দিয়ে বাংলা সাহিত্য পূর্ণতা পেয়েছে। যার জন্ম না হলে হয়তো বাংলা সাহিত্য অপূর্ণ থেকে যেত। যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক এই মানুষটি। আজকের এই দিনে আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’

রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দীন বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রজ্জ্বলনের যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, হাসান আজিজুল হক তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, ছোটগল্পকার, কবি, সংগীতজ্ঞ। তাঁর হাত ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো।’

ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আকুঞ্জি বলেন, ‘জীবন খুবই ছোট। কিন্তু শিল্পকর্ম বেঁচে থাকে আজীবন। হাসান আজিজুল হকও তার কর্মে মধ্যদিয়ে আজীবন বেঁচে থাকবে। কারণ এদেশের সাহিত্য থেকে রাজনৈতিক পর্যায় সকল ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে।’

নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, ‘হাসান আজিজুল হক স্যার যা লিখেন, তাই বিশ্বাস করেন। তিনি সাধারনের জন্য লিখেন সাধারণের মধ্যে থাকেন। ’

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন রাসিক মেয়র।

রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, একসময় কিছু উগ্র ছাত্র ক্যাম্পাসে হাসান আজিজুল হককে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবুও তাকে থামানো যায়নি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রগতির কথা বলেছেন। হাসান আজিজুল হক একজনই, তার সাথে কারো তুলনা করা যায় না।’

পরে বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিকের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মকে উপজীব্য করে আহসান কবীর লিটন নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘গল্পলোকের চিত্রকর’ প্রদর্শিত হয়। এর আগে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাসান আজিজুল হকের প্রায় সকল গ্রন্থের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইও বিক্রয় করা হয়। এতে সহযোগিতা করেছে ‘বইঘর’ ।#


শর্টলিংকঃ