সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাকী জীবনটা উপভোগ করে কাটাব:গেইল


ইউএনভি ডেস্ক:

শেষ দশকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যত রেকর্ড হয়েছে সবকিছুতেই ছিল ক্রিস গেইলের নাম। হয় তার নামে নতুন রেকর্ড হয়েছে, নয়তো তার রেকর্ডই ভেঙেছে অন্য কেউ। এভাবেই ক্রিস গেইল হয়ে উঠেছেন টি-টোয়েন্টির মহাতারকা।

গেইল
গেইল

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘দৈত্যাকার’ এ ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন। বিশ্বের নানা-প্রান্তে টি-টোয়েন্টি ফেরি করে বেড়ান। এবার এসেছেন বঙ্গবন্ধু বিপিএল মাতাতে।

সব সময়ই ক্রিকেট নিয়ে তার সঙ্গে হয় আলাপচারিতা। আজ মিরপুরের একাডেমি মাঠেও ক্রিকেট নিয়ে ‘বকবক’ করেছেন। তবে শুনিয়েছেন নতুন কিছু গল্প। ভাগাভাগি করছেন নিজের জীবন দর্শন।

প্রশ্ন : শেষ এক দশকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবথেকে বড় সুপারস্টার ছিলেন আপনি। নতুন কোনো সুপারস্টার চোখে পড়ছে?

ক্রিস গেইল : ‘বাজারে’ অনেক তরুণ, নতুন ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে বেছে নেওয়া কঠিন। প্রতিটি পর্যায়ে নতুন নতুন খেলোয়াড় আসছে। তারা প্রত্যেকেই টি-টোয়েন্টি খেলার পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে। তাদেরকে তৈরি হতে হবে। নিজেদেরকে উত্তরাধিকার ভাবতে হবে। নাম উজ্জ্বল করতে হবে। তাহলেই হয়তো আগামীর সুপারস্টার হতে পারবে। আমরা সবাই জানি, বিশ্ব চক্রের মতো। আমরা এসেছি, আবার চলে যাচ্ছি।

প্রশ্ন : আপনার মতো সুপারস্টার পাবো?

ক্রিস গেইল: না না, কেউ আমার মতো হতে পারবে না। ক্রিস গেইল, দ্য ইউনিভর্স বস একজনই। সেটা আমিই হয়ে থাকব। আপনি যদি এটাই জিজ্ঞেস করে থাকেন আমার মতো কেউ হতে পারবে কিনা? আমার উত্তর, না হতে পারবে না।

প্রশ্ন : আসলে জানতে চাচ্ছি আপনি রীতিমতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ফেরি করে বেড়িয়েছেন সারাবিশ্বে। আপনার পরিশ্রম, আপনার পারফরম্যান্স আপনাকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছেৃ

ক্রিস গেইল: তা তো অবশ্যই। আপনাকে শুরুটা করতে হবে। বিশ্বের সবপ্রান্তে খেলতে হবে। আপনাকে আপনার উপস্থিতি জানাতে হবে। আপনাকে সব ধরণের কন্ডিশনে পারফর্ম করতে হবে। বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে হবে। আমি আমার কাজ করেছি। তাতে সফলও হয়েছি। এখন প্রমাণ করার কিছু নেই। আমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে আমি আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ দেখতে পাচ্ছি। তাদেরকে আমি সব সময়ই আমার পথ অনুসরণ করার উপদেশ দিই। তবে তারা যথেষ্ট সুযোগ পায় না। কারণ, তাদের আন্তর্জাতিক সূচি থাকে। আমি যেভাবে সারাবিশ্বে খেলে বেড়িয়েছে তারা অনেকেই সেই সুযোগটি পায় না।

প্রশ্ন : বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। ক্রিকেট উপভোগ করছেন এখনও?

ক্রিস গেইল: অবশ্যই এখনও ক্রিকেট উপভোগ করছি। এখন হয়তো একটু ধীর গতির হয়ে গেছি। আপনাকে তো অবশ্যই আমার ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। ২০ বছর ক্রিকেট ক্যারিয়ার আমার। ক্রিকেটের পরও আমার একটি জীবন আছে। এ সময়ের জন্য আমাকে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা করে রাখতে হয়। পাশাপাশি কিছু ক্রিকেট খেলারও সুযোগ থাকে। হয়তো পুরো আসরে সেই সুযোগটি থাকে না। তাই কিছুটা রয়েসয়ে খেলতে হয়।

প্রশ্ন : ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আর কতোদিন চালিয়ে যেতে চান?

ক্রিস গেইল : এখনও অনেকেই ক্রিস গেইলকে ২২ গজে দেখতে চায়। এখনও ক্রিকেটের প্রতি সেই ভালোবাসাটা আছে। সেই প্যাশনটাও আছে এর প্রতি। আমি যতোটা সম্ভব ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চাই। এখানে-সেখানে খেলতে চাই। বিশ্ব ঘুরে বেড়াতে চাই। এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে বলে মনে করছি। শরীর যদি সাপোর্ট করে আমি আরও তরতাজা হতে পারব।

প্রশ্ন : ৪৫ এ থামতে পারেন?

ক্রিস গেইল: ৪৫? এটা দারুণ হতে পারে। হ্যাঁ, তাহলে ৪৫ ঠিক করি, নাকি?

প্রশ্ন : আপনি বিপিএলের প্রত্যেক আসরেই অংশগ্রহণ করে এসেছেন। পারফরম্যান্স উঠা-নামা করলেও ভালো করেছেন বেশিরভাগ সময়। মাঠে ফিরতে আপনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কী?

ক্রিস গেইল: এটা এমন একটি মঞ্চ যেখানে সব সময় আপনাকে পারফর্ম করতে হবে। দর্শকরা সব সময় প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাদের বাড়তি চাওয়া আমাদেরকে পারফর্ম করতে সাহায্য করে। তারা বিনোদন পেতে পছন্দ করে। এটা একজন খেলোয়াড়দে উদ্যমী করে তোলে। একজন খেলোয়াড় হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব তাদেরকে বিনোদিত করা। আমাদেরও চেষ্টা থাকে তাদেরকে যথেষ্ট সাহায্য করার। বাংলাদেশে খেলে আমি সব সময়ই উপভোগ করেছি। এবার হয়তো একটু দেরিতে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু বাকিটা সময় ভালো কিছু উপহার দিতে চাই।

প্রশ্ন : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে চান?

ক্রিস গেইল: খেলার সুযোগ পেলে তো ভালো। দরজা তো খোলাই আছে। দেখা যাক কি হয়। আমাদের তরুণ কয়েকজন ক্রিকেটার আছে। আমি খেলতে অবশ্যই মুখিয়ে আছি। আমি জানিয়েছি বোর্ডকে আমি সব সময়ই উন্মুক্ত আছি। সবাই জানেন, ইউনিভার্স বস সব সময়ই প্রস্তুত।

প্রশ্ন : ক্রিকেটের পর জীবন কিভাবে উপভোগ করবেন?

ক্রিস গেইল : জীবন তো চলছেই। আমি এখনই উপভোগ করছি। আমি ক্রিকেট ও জীবন একসঙ্গে উপভোগ করছি। ২০ বছর ক্রিকেট ক্যারিয়ার আমার। সব সময়ই ঘরের বাইরে থাকতে হয়েছে। তাতে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গ পাওয়া গেছে। নতুন খেলোয়াড়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানা গেছে। এটা অসাধারণ জীবন। জীবনে কখনো উপভোগ থামাতে পছন্দ করি না আমি। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি। ক্রিকেট, পরিবার, জীবন সব কিছুকে মিশিয়ে চলতে পছন্দ করি।

প্রশ্ন : কখন থেকে মনে হলো জীবনটা রঙিন। উপভোগ করা উচিত?

ক্রিস গেইল: আমার হার্ট সার্জারি হলো অস্ট্রেলিয়াতে। সেটাই আমার জীবনের প্রথম সার্জারি। সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাকি জীবনটা উপভোগ করেই কাটাব। কোনো কমতি রাখব না। যেকোনো পরিস্থিতিতে কখনো পেছনে ফিরে তাকাবো না। আমি সব সময়ই সময়টা উপভোগ করব।

(২০০৫ সালে জাতীয় দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া সফরে ছিলেন ক্রিস গেইল। সফরের তৃতীয় টেস্টের আগে তার হার্ট সার্জারি করা হয়। নিজের অটোবায়োগ্রাফি সিক্স মেশিন – এ গেইল বলেছিলেন, তার হার্টের ব্লক সম্পর্কে কারো ধারণা ছিল না। এমনকি পরিবারকেও জানাননি। সার্জারি সফল হওয়ার পর গেইল বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন)

প্রশ্ন : একেবারে শেষ পশ্ন। কোচিং পেশায় আসতে চান?

ক্রিস গেইল : পরিকল্পনা নেই। তবে শেষ বলতে তো কিছু নেই। হতেও পারে। ওই যে বললাম উপভোগ করব। আমি এখনও কিছু জায়গায় ঘুরতে পারিনি। সেসব জায়গায় যেতে চাই। পরিবারকে সময় দিতে চাই। আসলে পরিস্থিতি তৈরি করবে আমি ক্রিকেটের পর কি করতে যাচ্ছি।


শর্টলিংকঃ