সিনেমায় আগ্রহী মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের দ্বিতীয় হওয়া মিয়ামি


জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শৈশব ও কৈশোরের বেশিরভাগ সময়টাও সেখানে কেটেছে। বাবা-মা দু’জনের সরকারি চাকরি করেন। সেই সুবাদে ঘুরেছেন দেশের অনেক জায়গা। অনেকটা সময় কাটিয়েছেন রাজধানী ঢাকাতেও।

ছোটবেলা থেকেই মেধাবাী ছাত্রী। স্বপ্ন দেখেছেন বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবেন। সেই স্বপ্ন নিয়ে সাফল্যের সঙ্গেই শেষ করেছেন এমবিবিএস। শেষ করেছেন ইন্টার্নশিপও। কিছুদিনের মধ্যে যেকোনো মেডিক্যালে যোগ দিতে পারেন। ইচ্ছে আছে দেশের বাইরে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার।

তবে হুট করেই তিনি আলোচনায় চলে এলেন ২০১৯ সালের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের প্রথম রানার আপ হয়ে। সেইসঙ্গে মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল খেতাবও জয় করেছেন। ঠিক তাই। বলছি ফাতিহা খূল্দ মিয়ামির কথা। তিনি সবার কাছে মিয়ামি নামেই পরিচিত।

ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুকে বয়ে চললেও নিজেকে তিনি বিকশিত করেছেন নানাভাবে। স্বভাবে অনুসন্ধানী। নতুনকে জানার অনেক আগ্রহ তার। পছন্দ করেন চ্যালেঞ্জ নিতে। শিখেছেন কারাতে। কারাতে প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে ব্রোঞ্জ পদকও অর্জন করেছেন এই সুন্দরী।

ছবি আঁকায় পারদর্শী মিয়ামি। ২০০৪ সালে শিল্পী জাতীয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় সিলভার পদক পেয়েছিলেন মিয়ামি। নিয়মিত না আঁকলেও এর প্রতি একটা অনুরাগ রয়েছে তার।

এইসব কাজের সুবাদে শোবিজেও জড়িয়েছেন মিয়ামি। মডেল হিসেবে অংশ নিয়েছেন আড়ং, রেড অরিজিন, দেশি দশ, রঙ, ইয়োলোর মতো নামী ব্রান্ডগুলোর ফটোশুটে। র্যাম্পেও নিজেকে বেশ পরিচিত করে তুলেছেন তিনি।

মিয়ামি বলেন, ‘র্যাম্প মডেল হিসেবে অনেক কাজ করা হয়েছে আমার। আজরা মাহমুদের কাছ থেকে গ্রুমিং নিয়েছি র্যাম্পের জন্য। দেশে অনেক শোতে অংশ নিয়েছি। এছাড়া নেপালে অনুষ্ঠিত সার্ক ফ্যাশন উইকে অংশ নিয়েছি। ভারতেও বেশ কিছু র্যাম্প শো-তে কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো আমাকে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হওয়ার পথে প্রেরণা দিয়েছে।’

তিনি জানান, অনেকটা মজা করেই রেজিষ্ট্রেশন করেছিলেন এবারের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায়। ধীরে ধীরে যখন এগিয়ে যেতে থাকলেন তখন আত্মবিশ্বাসটা বাড়তে শুরু করলো। মনে হলো তিনি পারবেন, চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে।

মিয়ামি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে শোবিজে আমি একটু ধীর গতিতেই পথ চলছি। হুট করে কিছু একটা হয়ে যাবে এমনটা ভাবিনি কখনো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ সম্পর্কে জেনেছিলাম। মজা করেই নিবন্ধন করেছিলাম। বিজয়ী হতেই হবে এমন কিছু মাথায় ছিল না। একটা নতুন অভিজ্ঞতা হবে, অনেক কিছু জানা হবে।

সেটা ভেবেই অংশ নিয়েছিলাম। জীবনে এই প্রথম কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম। যখন একটু একটু করে সামনে এগিয়ে গেলাম এবং সেরা ৩০ এ পৌঁছালাম মনে হলো যে কিছু একটা হতেও পারে।’

অবশেষে সেকেন্ড হয়ে থামলেন মিয়ামি। এবারের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছেন রাফাহ নানজিবা তোরসা। আর মিয়ামির মাথায় উঠলো প্রথম রানার আপ হওয়ার মুকুট। তাতে কী মন খারাপ? মিয়ামির এক কথায় উত্তর, ‘একটুও না’।

তিনি বলেন, ‘এই মঞ্চটা আমার জন্য অনেক প্রাপ্তির। অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। এগুলো ভবিষ্যতের পথচলায় খুব কাজে দেবে। ফলাফল ঘোষণার পর মনে হচ্ছিলো যে ইশ! আরেকটু যদি ভালো করতাম, যদি আরও সিরিয়াস থাকতাম। বাট এটা নিয়ে আক্ষেপ নেই। কারণ মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’র শীর্ষ পর্যায়ে যারা ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই ভালো। সবারই যোগ্যতা রয়েছে সেরা হওয়ার। কিন্তু সবাই তো আর বিজয়ী হতে পারে না! এটা মেনে নিয়েছি আমি। এখন সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’

ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় এই সুন্দরী জানান, শোবিজে সব ধরনের কাজ তিনি করবেন। তবে নাটকের চেয়ে সিনেমা নিয়েই তার আগ্রহটা বেশি। মিয়ামি বলেন, ‘আমি সিনেমায় কাজ করতে চাই। এটা সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম। অনেক বিশাল আয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। তাই সিনেমা নিয়ে আমার মধ্যে ফ্যান্টাসি আছে।

ব্যতিক্রমী-মৌলিক গল্প, মানসম্মত নির্মাণ হলে তবেই কাজ করবো। আমি কিন্তু অনেক আগে থেকেই সিনেমায় কাজের অফার পেয়েছি। কিন্তু তখন শোবিজে নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছে ছিলো না। ভেবেছিলাম ডাক্তারি করবো পাশাপাশি র্যাম্প ও বিভিন্ন ফটোশুটে মডেলিংটা চালিয়ে যাবো। সেই ভাবনায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ। শোবিজে কাজ করবো। বিশেষ করে পছন্দমাফিক সিনেমায় কাজ করবো।’

নিজেকে অভিনয়ের জন্য তৈরি করতে কিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছেন মিয়ামি। শিগগির অভিনয়ের উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেবেন তিনি। শুরু করবেন কোর্স।

তাহলে ছোটবেলার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া, তার কী হবে? মিয়ামির জবাব, ‘এটা আমার জীবনের প্রথম স্বপ্ন। অনেক পরিশ্রমও করেছি আমি এটাকে পূরণ করতে। সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে কিছু একটা ফলাফল যেহেতু এসেছে, তাই আমি এখন মিডিয়াতে কাজ করতে চাই। কিন্তু ডাক্তারিকে বাদ দিয়ে নয়। শোবিজে কাজ, ডাক্তারি দুটোই চালাতে চাই। আমি আসলে সবক্ষেত্রে ‘পারফেকশনিস্ট’ হতে চাই। আর সেজন্যই আমি মনে প্রতিটি মেয়েই তার নিজের রাজ্যে সেরা। যদি সে তাকে তার স্বপ্নের মতো করে তৈরি করে নিতে পারে। আমি সেই সেরাদের অন্যতম একজন হতে চাই।’

পাশাপাশি আরও একটি কাজ তিনি করে যেতে চান। সেটি হলো বৃদ্ধদের জন্য নানারকম সেবামূলক ব্যবস্থাপনা। এ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে তার। ধীরে ধীরে সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন তিনি।

তবে আপাতত মিয়ামির ব্যস্ততা মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল হিসেবে। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় এই খেতাব জয় করেছেন তিনি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংককে বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল খেতাবজয়ীরা অংশ নেবেন। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন মিয়ামি খূল্দ মিয়ামি। তার জন্য শুভকামনা।


শর্টলিংকঃ